দেশজুড়ে

সৌদি গিয়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী, ২ সপ্তাহ না যেতেই ফিরলেন দেশে

হবিগঞ্জের মাধবপুরের এক তরুণী (২৬) গত ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে যান। ভালো চাকরির প্রলোভনে দালালরা তাকে বিনা খরচে সৌদিতে পাঠান। অথচ সেখানে যাওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় গৃহকর্মীর কাজ। সেই কাজ ঠিকমতো করলেও তাকে নানানভাবে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে গত ২ অক্টোবর ইমোর মাধ্যমে ভিডিওকলে বাবার কাছে নির্যাতনের বর্ণনা করেন ওই তরুণী।

Advertisement

আকুতি জানান তাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে। দ্রুত ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে তাকে ফেরত আনতে আবেদন করেন।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সৌদির রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) বরাবর একটি চিঠি দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সারওয়ার আলম।

চিঠিতে তিনি ওই তরুণীকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। দ্রুত তরুণীকে উদ্ধার করে সেফ হোমে নেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাতে তাকে সৌদি আরবে পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি শান ওভারসিসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

Advertisement

শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে বিমানযোগে দেশে ফেরেন ভুক্তভোগী তরুণী। বিমানবন্দর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বজনরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে ওই তরুণী হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

তরুণীর স্বজনরা জানিয়েছেন, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তিনি যৌন হয়রানির শিকারও হননি। তবে মানসিকভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়িতে ফেরার পর থেকে কারও সঙ্গে কথা বলছেন না।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার তরুণী/ছবি: জাগো নিউজ

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আল মামুন জাগো নিউজকে জানান, ওই তরুণীর শারীরিক অবস্থা ভালো। মানসিকভাবে তিনি ট্রমার মধ্যে আছেন। খুব কম কথা বলছেন। তার বিশ্রাম ও চিকিৎসা প্রয়োজন।

Advertisement

এর আগে গত ৬ অক্টোবর তরুণীর বাবা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে সৌদি আরবের রিয়াদে একটি নির্জন স্থানে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন দালাল কাশেম কোনো দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। তিনি তার মেয়েকে যেকোনো উপায়ে ফেরত চান।

অবশেষে মেয়েকে ফেরত পেয়েছেন বাবা। তবে মেয়ের মানসিক অবস্থা দেখে শঙ্কিত তিনি। জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা শনিবার (৮ অক্টোবর) জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা বিদেশ পাঠিয়ে আমার সুস্থ মেয়েটাকে নির্যাতন ও হয়রানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাইবো।’

আরও পড়ুন: দালালের খপ্পরে সৌদি গিয়ে নির্যাতনের শিকার তরুণী, ফিরে আসার আকুতি

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুপুর ১২টার মধ্যেই ওই তরুণী মাধবপুরে পৌঁছেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। যৌন হয়রানির মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তবে তাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। সঙ্গে খাবার ও পানির অভাব ছিল। অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।’

তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট উপজেলার আমতলী এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম ঢাকার শান ওভারসিজ নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তাকে সৌদি আরবে পাঠান। তার বাড়ি মাধবপুর উপজেলায় হলেও প্রতারণার মাধ্যমে দালাল চক্র পাসপোর্টে ঠিকানা লেখে নবীগঞ্জ উপজেলা।

পরে গত রোববার (২ অক্টোবর) তরুণীকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ মুসি।

এদিকে, তরুণীর বিদেশে যাওয়ার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, তার পাসপোর্টে বাড়ির ঠিকানা, বয়স পাল্টে দেওয়া হয়েছে। পাসপোর্টে দেওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী তার বয়স ২৬ বছর। তবে পরিবার বলছে, তরুণীর বয়স ১৯ বছর।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএএইচ/জেআইএম