জাগো জবস

প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডারে সৌরভ

মো. জিয়াউল হাসান সৌরভ। ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়। বাবা মো. নূরুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মা শিউলি আক্তার গৃহিণী। তিনি কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে বিএসসি এবং বায়োটেকনোলজি থেকে এমএস সম্পন্ন করেন।

Advertisement

সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাম হোসাইন—

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার ছেলেবেলার গল্প শুনতে চাই— জিয়াউল হাসান সৌরভ: পঞ্চম শেণি পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতেই পড়াশোনা করেছি। আব্বু প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুবাদে সব সময় কড়া শাসনের মধ্যে ছিলাম। তবে আব্বু সব সময় চাইতেন, যেন আমি পড়াশোনার পাশাপাশি গান, আবৃত্তিচর্চা ইত্যাদি করি। স্কুলে ভালো কিছু শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, তাই ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম হয়েছিলাম। পাশাপাশি কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকতে পেরেছিলাম। ইস্পাহানীর হোস্টেল ছিল আমার জন্য লাইফ চেঞ্জিং। অনেক অনেক ছাত্রের সান্নিধ্যে আসতে পারা, সামাজিকতা, শৃঙ্খলা, ভোরের শারীরিক কসরত—সবকিছু মিলিয়ে এখানে অসাধারণ লাইফ পেয়েছিলাম। পরে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। একজন প্রকৃত শিক্ষক কেমন হতে পারেন—তা এখানে প্রত্যক্ষ করেছি।

জাগো নিউজ: বিসিএস পরীক্ষা দেবেন—এ সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?জিয়াউল হাসান সৌরভ: সুপ্ত ইচ্ছা জন্মেছিল ছোটবেলা থেকেই। যখন জাতীয় দিবসগুলোয় ইউএনওর দায়িত্ব ও মর্যাদা দেখতে পেতাম। তা ছাড়া আব্বু সব সময়ই বিসিএস ক্যাডার অফিসারদের বিভিন্ন গল্প করতেন। বিধায় এর প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসাও জন্মেছিল। আব্বু বলতেন, এমনভাবে পড় যেন প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার হতে পারিস। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে, প্রথমবারেই প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছি। ভার্সিটি লাইফে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলাম আমার হল রুমমেটের উৎসাহে। যিনি ৩৬তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারে কর্মরত।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কীভাবে?জিয়াউল হাসান সৌরভ: প্রথমে সিলেবাস অনেক বড় হলেও গবেষণা করে বিষয়ভিত্তিক নিজের শক্তিশালী ও দুর্বল জায়গা শনাক্ত করেছি। যেসব বিষয় কম মনে থাকতো বা পড়তে ইচ্ছা হতো না; সেগুলো গ্রুপ স্ট্যাডি করে আয়ত্ত করেছি। পেপার পড়া কখনোই মিস দিতাম না। যেহেতু পড়াশোনার পাশাপাশি মাস্টার্সের গবেষণা করতে হয়েছে। মোবাইলে অনলাইন ম্যাটিরিয়ালসের স্ক্রীনশট বা বইয়ের ইমেজ তুলে রাখতাম। যেন কাজের ফাঁকের সময়টুকু কাজে লাগাতে পারি। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অন্ধ থাকার সুযোগ নেই। তাই বড় ভাইদের অভিজ্ঞতা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম, যাতে প্রস্তুতির কৌশলে ঘাটতি থাকলে তা ধরা পড়ে।

জাগো নিউজ: এতটা পথ পাড়ি দিতে কার অনুপ্রেরণা সব সময় পাশে ছিল?জিয়াউল হাসান সৌরভ: আব্বু, আম্মু ও দুই বোন সব সময়ই সাপোর্ট দিয়েছেন ও সাহস জুগিয়েছেন। আমার স্ত্রী ও তার পরিবার সব সময়ই বিশ্বাস রেখেছে আমার ওপর। যা আমার প্রেসার অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল। রুমমেট ও ৩৬তম বিসিএসের কৃষি ক্যাডার দেলোয়ার হোসেন ভাই আমার প্রস্তুতিতে সব সময়ই ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব সবাইকে সাপোর্টিভ পেয়েছি।

জাগো নিউজ: কৃষি বিষয়ে পড়ে প্রশাসনে যোগ দিয়ে কীভাবে দেশের সেবা করতে চান?জিয়াউল হাসান সৌরভ: স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও ত্বরিৎ সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে চাই। সেবার ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক মানুষকে সেবার আওতায় নিয়ে আসতে চাই। কৃষিতে সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। যেন কৃষক ও জনগণ উভয়পক্ষই উপকৃত হন।

জাগো নিউজ: যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান, তদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?জিয়াউল হাসান সৌরভ: ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন পড়ুন ও বারবার রিভিশন দিন। প্রয়োজন ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার কমিয়ে দিন। দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। যে বিষয়ে দুর্বলতা আছে; সেগুলোর গ্রুপ স্ট্যাডি করুন। প্রয়োজনে অফলাইন বা অনলাইনে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সহায়তা নিন। ভাগ্য অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। দৈনিক প্রার্থনা করুন যাতে আপনার পরিশ্রম বিফলে না যায়।

Advertisement

এসইউ/এএসএম