বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তৃতীয় বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেই সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
Advertisement
এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে থাকা চেয়ার ও মাইক ভাঙচুর করেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যানার-ফেস্টুনও। এতে পণ্ড হয়ে গেছে ছাত্র অধিকার পরিষদের ডাকা সমাবেশ।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তৃতীয় বার্ষিকী ছিল আজ। এ উপলক্ষে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে বিকেল ৪টায় ‘স্মরণসভা’র আয়োজন করে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
Advertisement
আর বিকেল সাড়ে ৪টায় একই স্থানে নিরাপদ শিক্ষাঙ্গণের দাবিতে ‘নির্যাতনবিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ ও সামাবেশ’র আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।
‘স্মরণসভা’র আয়োজক ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’ নামের সংগঠনটিও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে একই আয়োজনে দুটি কর্মসূচি করা হয়।
লোহার পাইপ হাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের এক কর্মী।ছবি: জাগো নিউজ
তবে কোনো কর্মসূচিই ঠিকমতো শুরুই করতে পারেননি আয়োজকরা। তার আগে বিকেল ৪টার দিকে সেখানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
Advertisement
এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনের নেতারা তবে আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজনের নাম জানা গেছে। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ আহসান।
সমাবেশে হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম এম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপদপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনকে।
তাদের সঙ্গে অংশ নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকশো নেতাকর্মী।
এদিকে, ঘটনার সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ।
হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, ‘তারা (ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা) ক্যাম্পাসে বহিরাগত, মৌলবাদীদের নিয়ে কর্মসূচি করে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করতে যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কি না? এসময় তারা কোনো কিছু না দেখিয়ে উল্টো আমাদের ওপর হামলা করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিরোধ করেছে।’
একনজরে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড
আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
আরও পড়ুন: আবরার হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন
পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে তদন্তে এ মামলায় আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
আল-সাদী ভূঁইয়া/এএএইচ/এএসএম