# ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি# মূল্যস্ফীতির আগুনে পুড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা# আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতি নিয়ে ‘লুকোচুরি’# মূল্যস্ফীতি কমবে জানালেন পরিকল্পনামন্ত্রী
Advertisement
মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় বিশ্ব। ঠিক সেই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মহামারি ও যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যায় জ্বালানি তেলের দাম। লাগামহীন হয়ে পড়ে খাদ্যপণ্যের বাজারও। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই বেড়ে যায় প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামও। এরপর সামনে আসে দেশের মূল্যস্ফীতির তথ্য, যা এখন পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।
জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার হয় ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর আর কখনো এ সূচক ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।
সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটিকে ‘সুখবর’ বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সামনে আরও সুখবর আছে অর্থাৎ আরও মূল্যস্ফীতি কমবে বলে মনে করছেন মন্ত্রী।
Advertisement
তবে মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমলেও তাতে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এখনো বিপাকে দেশের সাধারণ মানুষ। ৯ শতাংশের ওপরে থাকা এ মূল্যস্ফীতির আগুন সইতে পারছেন না ক্রেতারা। বিশেষ করে যাদের আয় গত কয়েকবছর ধরে একই জায়গায় রয়েছে, তারা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
আরও পড়ুন: টানা তিন মাস শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি বিবিএস ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
বিবিএসের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর অর্থ হলো- গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর সেপ্টেম্বরে তা কিনতে ১০৯ টাকা ১০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আর গত বছরের আগস্টে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, তা পেতে এ বছরের আগস্টে খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
Advertisement
আরও পড়ুন: লাগামহীন নিত্যপণ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই চ্যালেঞ্জ
মূল্যস্ফীতির হার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত ও খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। প্রসাধন-সামগ্রী, জুতা, পোশাক, বাসাভাড়া, আসবাবপত্র, চিকিৎসা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ও বিবিধ সেবা খাতের মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী- চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুগ্ধজাতীয় ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনতে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।
‘সুখবর’ দিলেন পরিকল্পনমন্ত্রীমূল্যস্ফীতির হার আগামী দিনে কমবে বলে আশ্বস্ত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এটিকে তিনি দেশবাসীর জন্য ‘সুখবর’ বলেও মনে করছেন।
এম এ মান্নান বলেন, ‘একটি সুখবর আছে। মূল্যস্ফীতির পাগলাঘোড়ার লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে সেটি কমেছে। এর কারণ হচ্ছে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে চার কোটি মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। সেইসঙ্গে সরকারের নানা উদ্যোগে যারা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা উপকৃত হচ্ছেন। ফলে মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন ফসল ঘরে উঠবে। এখন সয়াবিন তেলের দাম কমছে। সামনে মূল্যস্ফীতির হার আরও কমবে।’
আরও পড়ুন: সব রেকর্ড ভেঙে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৭ শতাংশ
আগস্টে মূল্যস্ফীতি বাড়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের ধাক্কাটা লেগেছিল সরাসরি। সারা বিশ্বে এখন সব পণ্যের দাম বাড়তি। তবে সরকার নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর সুফল মিলছে, সামনে আরও মিলবে।’
মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে ‘লুকোচুরি’এদিকে, জুলাইয়ের পর আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে প্রায় দুই শতাংশ বেড়ে যায়। ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হয়। তবে ‘অদৃশ্য’ কারণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এখনো আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেনি। এরই মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসও পেরিয়ে গেছে। অথচ আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ে লুকোচুরি করছে বিবিএস ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সাধারণত যেকোনো মাসের প্রথম সপ্তাহেই আগের মাসের মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে বিবিএস। সেই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় তারা।
বিবিএস ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া যায়নি। এজন্যই আগস্টের মূল্যস্ফীতির তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বিবিএস।
আরও পড়ুন>> সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন: অর্থমন্ত্রী
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির তথ্য মন্ত্রী (পরিকল্পনামন্ত্রী) মহোদয়ের কাছে পাঠিয়েছি। তবে এখনো আমাদের কাছে ফাইল ফেরত আসেনি।’
অক্টোবর মাস চললেও এখনো আগস্টের মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রতিমাসে প্রকাশের কোনো বাধ্যবাধকতা তো নেই।’
এমওএস/এএএইচ/জিকেএস