ধর্ম

নবিজি জান্নাত ও জাহান্নামে কী দেখেছিলেন?

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের ভেতরে উঁকি দিলাম, ‘দেখতে পেলাম তার অধিকাংশই গরিব ও অভাবি।’ এভাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামের ভেতরেও উঁকি দিয়ে দেখলেন। এ সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসে কী বর্ণনা রয়েছে?

Advertisement

১. হজরত উসামা ইবনু যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (মেরাজের রাতে) আমি জান্নাতের প্রবেশদ্বারে দাঁড়ালাম। প্রত্যক্ষ করলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণি, মিসকিন আর ধনীদের দেখলাম বন্দী অবস্থায়। যারা জাহান্নামবাসী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার আদেশ করা হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই নারী জাতি।’ (মুসলিম : ৬৮৩০)

২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে উঁকি দিলাম, আর দেখতে পেলাম, তার অধিকাংশই দুঃস্থ গরিব লোক। এরপর আমি জাহান্নামের দিকে উকি দিলাম, আর দেখতে পেলাম জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশই নারী জাতি।’ (মুসলিম : ৬৮৩১)

৩. হজরত আবু তাইয়্যাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, মুতারিফ ইবনু আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছ থেকে এসে হাদিস বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে নারী জাতি সবচেয়ে কম।’ (মুসলিম : ৬৮৩৫)

Advertisement

৪. জান্নাত মানুষের জন্য নেয়ামত আর জাহান্নাম মানুষের জন্য শাস্তির স্থান। এ জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দোয়ার মাঝে সব সময় একটি দোয়া পড়তেন। যা হাদিসে এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার মধ্যে একটি ছিল এই যে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নিমাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুঝাআতি নিকমাতিকা ওয়া ঝামিয়ি সাখাত্বিকা।’

Advertisement

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার দেওয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা থেকে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব নারীকে সতর্ক করেছেন। যেন তারা তাদের দুনিয়ার জীবনের চলাফেরায় সতর্ক হয়। ফেতনা থেকে হেফাজত থাকে। হাদিসে পাকে নবিজি বলেন-

৫. হজরত উসামা ইবনু যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আমার (ইন্তিকালের) পরে পুরুষদের জন্য নারীদের ফেতনার চেয়ে অধিকতর ক্ষতিকর কোনো ফেতনা রেখে যাইনি।’ (মুসলিম : ৬৮৩৮)

৬. হজরত উসামা ইবনু যায়েদ ইবনু হারিসাহ ও সাঈদ ইবনু যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সনদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি আমার (ইন্তিকালের) পরে মানুষের মধ্যে পুরুষদের জন্য নারীদের তুলনায় অধিকতর ক্ষতিকর কোনো ফেতনা ছেড়ে যাইনি।’ (মুসলিম : ৬৮৩৯)

এ হাদিসগুলো নারীদের জন্য সতর্কবার্তা। তারা যে কোনো গুনাহের কাজ থেকে নিজেদের যেমন হেফাজত করবে তেমনি যাবতীয় ফেতনা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরও এ ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে সতর্ক করেছেন এভাবে-

৭. হজরত আবু সাঈদ আল খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তাআলা সেখানে তোমাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করতেছেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করো। তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনী ইসরাঈলদের মাঝে প্রথম ফেতনা নারীকেন্দ্রিক ছিল।’ (মুসলিম : ৬৮৪১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের নেয়ামত দান করুন। জাহান্নামের শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। নারীদের ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। নারীদেরও যাবতীয় ফেতনা, গুনাহ ও জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম