ইরানে পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাহসা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। খবর বিবিসির।
Advertisement
চলমান অস্থিরতার বিষয়ে প্রথমবার এমন মন্তব্য প্রকাশ করলেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেন, এই ‘দাঙ্গা’ ইরানের চিরশত্রু এবং তাদের মিত্রদের দ্বারা প্ররোচিত। তার শাসনের সময়কালে এরকম বিক্ষোভ গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই বিক্ষোভের প্রতি সহিংস প্রতিক্রিয়ায় তারা ‘শঙ্কিত’। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর তীব্র সহিংস দমনপীড়নের খবরে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, এই বিক্ষোভকারীরা ‘ন্যায়বিচারের’ জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইরানি নারীদের পাশে রয়েছে যারা তাদের সাহসিকতা দিয়ে বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে।
Advertisement
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়ায় একই মনোভাব প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সোমবার লন্ডনে ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে দেশটি। তাকে বলা হয়েছে, অস্থিরতার জন্য দেশের বাইরের লোকজনকে দোষারোপ করার পরিবর্তে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য নিজেদেরই দায়িত্ব নেওয়া উচিত এবং জনগণের উদ্বেগের কথা শোনা উচিত।
দেশটি নারীদের হিজাব পরার কঠোর আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি কোমায় চলে যান এবং এর তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়। এরপরই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এদিকে মাহসা আমিনির পরিবার অভিযোগ করেছে যে, পুলিশ তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে এবং তাদের একটি গাড়ির সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, তার প্রতি খারাপ আচরণ করা হয়নি এবং তিনি হঠাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ এবং আয়াতুল্লাহ খামেনির দিকে ইঙ্গিত করে ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’-এ ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন নারীরা। অনেকেই মাথার স্কার্ফ খুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
Advertisement
সোমবার পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডেটদের একটি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, মাহসা আমিনির মৃত্যুতে ‘আমরা মর্মাহত’।
তিনি বলেন, যেটা স্বাভাবিক নয় তা হলো কিছু লোক কোনরকম প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়াই রাস্তা-ঘাটকে বিপজ্জনক করে তুলেছে, কুরআন পুড়িয়েছেন, পর্দানশীন নারীদের হিজাব খুলে দিয়েছেন এবং মসজিদ ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
ইরানের সব রাষ্ট্রীয় বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী আয়াতুল্লাহ খামেনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের সব ক্ষেত্রে শক্তি অর্জনকে সহ্য করতে না পেরে বিদেশি শক্তিগুলো ‘দাঙ্গার’ পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতার নীলনকশা এঁকেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার দখলদার মিথ্যা ইহুদিবাদী শাসক ইসরায়েল এবং তাদের সঙ্গে তাদের অর্থ প্রদানকারী দালাল আর বিদেশে থাকা কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানিরাও এতে সহায়তা করছে।
তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বলেন, তারা এই অস্থিরতার সময় অবিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। নরওয়ে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইরান হিউম্যান রাইটস বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছে। জাতিগত বেলুচ অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে ৪১ জন বিক্ষোভকারী শুক্রবার জাহেদানে এক সংঘর্ষে মারা গেছেন।
তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, নিরাপত্তা কর্মীসহ ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইরানের নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সর্বশেষ এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহে আরও অবরোধ আরোপ করবে।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করার একদিন পর আয়াতুল্লাহ খামেনির মন্তব্য সামনে এলো। সেখানে বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করে এবং সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়। তেহরান, মাশহাদ, ইসফাহান, শিরাজ, তাবরিজ এবং কেরমানশাসহ দেশের অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
টিটিএন