ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এখন কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকার নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের বিধি লঙ্ঘনের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকা কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালায় ইসির প্রস্তাবে এসব সংশোধনী এনে ভেটিং শেষে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত বিধিমালা পাওয়ার পর পরই এ নিয়ে বৈঠক করে কমিশন। এখন গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশনের আইন শাখা। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবারই গেজেট প্রকাশ করা হবে। এরপর চার শতাধিক ইউপির তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা করা হবে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।ইউপি ছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সকল নির্বাচনে বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত বিধিমালা পেয়েছি। খুটিনাটি দেখে দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এর পরই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফাঁকে ১১ থেকে ১২ দফায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় ৪০০ ইউপিতে আগামী বৃহস্পতিবার বা রোববার তফসিল ঘোষণা করার হতে পারে বলেও জানান তিনি।ইসি কর্মবকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান নেই এবং আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কমিশনের প্রস্তাবিত বিধিমালায় অর্থদণ্ড কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও নাকচ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।বিধিমালার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, আচরণ বিধিমালা সংশোধনীতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে রেখে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে ওই ধারাটি বাদ দিয়েছে। এতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। এমনকি কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। কেননা এ পর্যন্ত বিধি লঙ্ঘনের দায়ে কমিশন কারো প্রার্থিতা বাতিল করেনি।নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় সরকারভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আচরণ বিধিতে প্রার্থিতা বাতিলে কমিশনের প্রস্তাবিত ধারার বিষয়ে আপত্তি থাকায় এখন আইন ও বিধি অনুযায়ী, বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় জেলা-জরিমানার মধ্যে দণ্ড সীমাবদ্ধ থাকবে।খসড়া আচরণ বিধিমালার ৩২ ধারায় বলা হয়েছিল, যেকোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে এমন তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্তে অপরাধ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল করতে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেবে ইসি।এদিকে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বিধি লঙ্ঘন করার অপরাধে দণ্ড কমিয়ে আনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত পরিচালনা বিধিমালায় রাজনৈতিক দলের অপরাধে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে তা কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করার করা হয়েছে।এদিকে এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে না থাকলে বিধি লঙ্ঘন বেড়ে যাতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা দেয়া রয়েছে। আইনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান না থাকলেও বিধিমালায় তা যুক্ত করলে ভালো হতো। এতে প্রার্থীদের বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা হারানোর ভয় থাকতো।উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনায় ভোটের জন্য উপযুক্ত ইউনিয়ন বাছাই করে ধাপে ধাপে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসেবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সবগুলো ইউপির নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।এইচএস/বিএ
Advertisement