ফিচার

মানুষের চর্বির রমরমা ব্যবসা, ব্যবহার হতো যেভাবে

প্রাচীন ইতিহাস ছিল খুবই অদ্ভুত। এখন আমাদের কাছে এখন অদ্ভুত শোনালেও সেসময় এগুলোই ঘটতো বাস্তবে। ১৬ শতাব্দীতে ইউরোপে রমরমা ব্যবসা ছিল মানুষের চর্বির। বেশ চড়া দামে সেগুলো কিনতেন সমাজের ধনী ব্যক্তিরা। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন শ্রেণির মানুষের নাগালের বাইরেই ছিল এগুলো।

Advertisement

এই চর্বি সংগ্রহ করা হতো বন্দিদের থেকে। তাদের ফাঁসি দেওয়ার পর শরীরকে টুকরো টুকরো করে কেটে চর্বি আলাদা করে বিক্রি করা হতো। মানুষের এই চর্বি সেসময় অ্যাকসুঙ্গিয়া হোমিনিস বা দরিদ্র পাপের চর্বি নামে পরিচিত ছিল। যারা প্রচুর অর্থের মালিক ছিলেন, কেবল তারাই এই চর্বি কেনার সামর্থ্য রাখতেন। অন্যদিকে বিপুল অর্থে এই চর্বি বিক্রি করে সম্পদের মালিক হতেন জল্লাদরা।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছিল এই ব্যবসার চল। বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্সে। মূল্যবান এই চর্বি শুধু বন্দিদের থেকেই নয় আটককৃত সৈন্যদের থেকেও সংগ্রহ করা হতো। ১৬০১ সালে প্রথম এই চর্বি ব্যবহারের শুরু হয়। ওস্টেন্ডের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ডাচ সার্জনরা যুদ্ধক্ষেত্রে চর্বি সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এগুলো তারা তাদের নিজেদের সৈন্যদের ক্ষতের চিকিৎসায় ব্যবহার করেছিল।

মূলত এই চর্বি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। তাই বেশিরভাগ চর্বিই ফার্মেসিতে পাঠানো হতো এবং তা দিয়ে শরীর ও দাঁতের ব্যথা, বাতের মতো রোগ ইত্যাদির জন্য ওষুধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হতো। এমনকি এটি তখন হাড় মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও দাগ কমাতে, ক্ষত নিরাময়েও মলমের মতো করে ব্যবহার হতো মানুষের চর্বি। চিকিৎসকরা এই চর্বি লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতেন ক্ষত স্থান। খুব কম সময়েই ক্ষত সেরে উঠতে সাহায্য করত এই চর্বি।

Advertisement

১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়েও এই জঘন্য প্রথাটি প্রচলিত ছিল। ১৯ শতকের শুরু দিকে জার্মানিতে চিকিৎসকরা মানুষের চর্বি ক্ষত জীবাণুমুক্তকরণ এবং অস্ত্রোপচারের জন্যও ব্যবহার করতেন। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মানুষের চর্বি দিয়ে তৈরি মলম বিক্রি হতো বাজারে। ধীরে ধীরে এই প্রচলন বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র: অ্যানসাইন্ট অরিজিন

কেএসকে/এএসএম

Advertisement