বিমাগ্রাহকের মামলায় জেলে যাওয়া হোমল্যান্ড লাইফের লন্ডন প্রবাসী সাত পরিচালক শর্তসাপেক্ষে জামিনে বেরিয়েই ‘জোরপূর্বক’ বোর্ডসভা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহীর (সিইও) অনুপস্থিতিতে রোববার (২ অক্টোবর) রাতে মতিঝিলে অবস্থিত কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে তারা এ বৈঠকে বসেন।
সাত পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন- হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আবদুর রব, পরিচালক কামাল মিয়া, পরিচালক আবদুর রাজ্জাক, পরিচালক আবদুল আহাদ, পরিচালক জামাল উদ্দিন এবং পরিচালক আবদুল হাই।
গ্রাহকের বিমা দাবি না দেওয়ার মামলায় গত ২১ সেপ্টেম্বর হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লন্ডন প্রবাসী এ সাত পরিচালককে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। ওইদিন গ্রেফতার আসামিদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
Advertisement
বিমা দাবির টাকা না পেয়ে মাগুরার চারজন গ্রাহকের চারটি মামলায় এ পরিচালকদের গ্রেফতার করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর তাদের জামিন আবেদন করা হলেও তা নাকচ করেন আদালত। সেইসঙ্গে ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুরার আদালতে আসামিদের হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর এ সাত পরিচালক মাগুরার আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে শনিবার (১ অক্টোবর) তারা ঢাকায় আসেন বলে জানা গেছে। এরপর রোববার রাতে জোরপূর্বক বোর্ড সভায় বসেন তারা।
হোমল্যান্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোনো নোটিশ না দিয়েই জেল থেকে বের হয়ে আসা পরিচালকরা জোরপূর্বক সিইও ও চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বোর্ড সভা করেছেন। এ ধরনের বোর্ড সভার আইনত কোনো ভিত্তি নেই।
জেল থেকে বের হওয়া সাত পরিচালকের সঙ্গে এ সভায় অংশ নেন আরেক পরিচালক মোহাম্মদ শামিম আহমেদ। যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের পরিচালকরা জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা আজ দুপুরে কোম্পানিতে গেছেন।
Advertisement
আপনারা রাতে কোম্পানির কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের বৈঠকের উদ্দেশ্য কী- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা কোনো বোর্ড সভা করিনি।’
এ কথা বলেই ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জানা গেছে, প্রায় ১৪ লাখ টাকার বিমা দাবি না দেওয়ায় হোমল্যান্ড লাইফের সাত পরিচালকের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন মাগুরা জেলার চার গ্রাহক। মামলার এজাহারে তারা নিজেদের কোম্পানির গ্রাহক হিসেবে দাবি করেন।
এ চার মামলায় একটির বাদী আজর আলী। তিনি নিজে হোমল্যান্ড লাইফের একজন পলিসি হোল্ডার। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির একজন এজেন্টও। তার মামলা নং-২২৭/২২। গত ২ আগস্ট তিনি এ মামলা করেন। এ মামলায় ১৯ জন সাক্ষীর সবাই বিমাগ্রাহক।
অন্য একটি মামলার বাদী নায়েব আলী। তার মামলা নং- ২২৮/২২। নায়েব আলীর পাওনা ১০ হাজার ৫০৬ টাকা। পলিসি নং-এ-৪৫০০০০২৬০৯-৬। এ মামলায় সাক্ষী ১৫ জন। তারাও সবাই বিমাগ্রাহক। তাদের মোট পাওনা দুই লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬ টাকা।
আরেক মামলার বাদী সৈয়দ মোফাক্কার আলী রিন্টু। এ গ্রাহক প্রায় চার লাখ টাকা বিমা দাবি পাওনা দেখিয়ে মামলা করেন। মামলা নং-২২৯/২২। মামলায় সাক্ষী ৩৯ গ্রাহক। এর মধ্যে ২৩ জন গ্রাহকের পাওনা টাকা কত তার কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি মামলার এজাহারে।
চার মামলার আরেকটি করেছেন মো. হাবিবুর রহমান। পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৮ টাকার বিমা দাবি আদায়ের জন্য তিনি মামলা করেছেন। তার মামলা নং-২৩০/২২। এ মামলাতেও ৪৫ জন সাক্ষী। এজাহারে বলা হয়েছে, বাদী ও সাক্ষী সবাই বিমাগ্রাহক।
২০১০ সালে হোমল্যান্ড লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান সিলেটের কাজী এনাম উদ্দিন আহম্মদের ছেলে আরাফাত কাজী আহম্মদ চেক প্রতারণার মামলায় ছয়মাসের জেল খাটেন। পরে জামিন নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যান। বর্তমানেও আরাফাত কাজী আহম্মদ লন্ডনে পলাতক।
হোমল্যান্ড লাইফের কাছ থেকে জমি বিক্রির বায়না বাবদ টাকা নিয়ে পরে জমি রেজিস্ট্রি ও বায়নার টাকা ফেরত না দেওয়ার মামলায় আরাফাত কাজী আহম্মদকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ পঞ্চম আদালত। ২০১০ সালের ১০ মার্চ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
এমএএস/এএএইচ