দেশজুড়ে

‘মোর জয়ার লাশটাও কি শ্যাষবার দেখির পাবো না’

‘ফায়ার সার্ভিস কইছে বাকি তিনডা লাশ পাওয়া সম্ভাবনা কম। মোর জয়ার লাশটাও কি শ্যাষবার দেখির (দেখার) পাবো না। ভগবান জয়ার মুখ একবার দেখাও।’ এভাবে আহাজারি করছিলেন পঞ্চগড় চন্মাত কামাল কাজলদিঘী ঘাটিয়া পাড়া এলাকার ধীরেন্দ্র নাথ।

Advertisement

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তার স্ত্রীর সঙ্গে মহালয়া দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন দুই মেয়ে জয়া (২) ও জুথী (৪)। সেদিন সাঁতার কেটে নিজেকে বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী আলোশ্বরী, কিন্তু আগলে রাখতে পারেননি দুই সন্তানকে। ঘটনার তিন দিন পর জুথীর মরদেহ পেলেও এখনো নিখোঁজ জয়া। একজনকে সৎকারের পর আরেক সন্তানের অপেক্ষায় করতোয়ার পাড়ে দিন কাটছে ধীরেন্দ্র নাথের।

জয়ার বাবা বলেন, ‘দুই মেয়েকে নিয়ে সবসময় বাড়ি আলোকিত ছিল। সেদিন আলোশ্বরীর সঙ্গে পাঠে দিয়া টাকা দিলুম মা দুইটাকে বিস্কুট কিনি দিবে। সব কাড়ি নিলে ভগবান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক সন্তান সৎকার করি আরেক সন্তানের জন্য ছয় দিন ঘুম নাই খাওয়া নাই। ভগবান আর কী পরীক্ষা নিবে।’

Advertisement

ধীরেন্দ্র নাথের ভাই সরেন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘বউদি তো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়া গেইছে। দাদা আমি সবাই মিলি অপেক্ষায় আছি লাশটা পাইলে সৎকারটা করমো। কিন্তু আজ ফায়ার সার্ভিস কইছে পাওয়া যাইবে না। সবাইকে পাওয়া যায় কেনে জয়াকে পাওয়া যায় না।’

নৌকাডুবির ঘটনায় স্বজনদের দেওয়া তালিকা অনুসারে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামের মদন চন্দ্রের ছেলে ভুপেন ওরফে পানিয়া, বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন এবং পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথের মেয়ে জয়া রানী।

এদিকে শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নিখোঁজ তিনজনকে খুঁজতে ষষ্ঠ দিনের উদ্ধার কাজ শুরু করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ৭০ কর্মী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায়।

তিনি বলেন, বাকি তিনজনের মরদেহ পাওয়া সম্ভবনা খুবই কম। হয়তো মরদেহগুলো পানিতে ভেসে গেছে অথবা বালুর নিচে চাপা পড়ে আছে। আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। রংপুর রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের ডুবুরি দলসহ ৭০ জন উদ্ধার কর্মী কাজ করছে।

Advertisement

স্টেশন কর্মকর্তা আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আরও দুদিন উদ্ধার অভিযান চালানোর নির্দেশ রয়েছে।

গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৬৯ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে বোদা উপজেলার ৪৫ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের একজন আছেন।

এসজে/এএসএম