কৃষি ও প্রকৃতি

আমন ধান চাষে নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। এ যেন বসন্ত বাতাসে আমন ধানের সবুজ ঢেউ জেলার কৃষকদের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজপাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। এ যেন রোপা আমন ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

Advertisement

ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠে কৃষকের মন। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথা সময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এবার আমন চাষের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে মাঠে দোল খাওয়া সবুজ ধানে নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় ৭২ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর, উফশী জাতের ৬৬ হাজার ৩২৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি।

কদিন পরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। মাঠ ভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠবে আনন্দের ছোঁয়া। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। আমন মৌসুমকে ঘিরেই এমন স্বপ্ন দেখছে এ অঞ্চলের চাষিরা।

Advertisement

এ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট কিছুটা থাকলেও সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় কেটে উঠেছেন কৃষক। ফলে ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সম্প্রতি জেলার কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের কর্ণসূতি গ্রামে গেলে দেখা যায়, রোপা আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি ধানের ক্ষেতে দুলছে সবুজপাতা। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকের। কৃষকরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এবং পার্চিং ব্যবহার করছেন কেউ কেউ।

স্থানীয় কৃষক এনামুল হক জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত আমন ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। আগামী মাসের শেষের দিকে ধান কাটা শুরু হবে। তখন পূরণ হবে আমাদের স্বপ্ন।

উপজেলার কর্ণসূতি গ্রামের কৃষক আবু বক্কার সিদ্দিক, নূরুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই জানান, এ বছর ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কোনো ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন। আরেক কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, ধান ক্ষেতে দুই দফায় সার-কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। ধানগাছের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে এবারে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে। সরকার যদি ন্যায্য দাম দেয় তাহলে লাভবান হবেন তারা।

কামারখন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জাগো নিউজকে বলেন, রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। এবার এ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জাগো নিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭২ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। তবে আর্জিত হয়েছে ৭৪ হাজার ১১৫ হেক্টর। কৃষকদের ভালো ফলন পেতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

এমএমএফ/এমএস