মোঃ রেজোয়ান হোসেন
Advertisement
পুরান ঢাকায় অবস্থিত লালবাগ কেল্লা দাঁড়িয়ে আছে ৪০০ বছর ধরে। ঢাল তলোয়ার নিয়ে সৈন্যরা একসময় পাহারা দিত এখানে। ঢাকাকে বহিঃশত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল এই দুর্গ। এছাড়া এখানে বিচার কার্য সম্পাদন করা হত।
লালবাগ কেল্লা ১৬১৮ খৃষ্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম শাহ্। মুঘল আমলে এটি ছিল পূর্ব বাংলার রাজধানী। একসময় লালবাগ কেল্লায় ৫০০ সেনার সমাগম ছিল। বড় কাটারা থেকে সেনাদের রসদ সরবরাহ করা হত।
বর্তমানে প্রতিদিন দেশি বিদেশি পর্যটকে মুখরিত হয়ে ওঠে লালবাগ কেল্লা। মুঘল আমলে নির্মিত সুরক্ষিত একটি দুর্গ লালবাগ কেল্লা।
Advertisement
তখনকার সময়ে পর্তুগিজ, মগ ও শত্রু সৈন্যরা নদীপথে এসে ঢাকায় আক্রমণ করে সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে সম্রাট লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করার নির্দেশ দেন।
লাল ইট, মার্বেল পাথর এবং কষ্টি পাথর দিয়ে নির্মিত এই কেল্লা যেমন দামি, তেমনি সমৃদ্ধ বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। লালবাগ কেল্লার প্রধান ফটকের সামনেই ছিল নদী।
বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে ছিল লালবাগ কেল্লার প্রাচীর। তবে বুড়িগঙ্গা এখন অনেকটা দূরে চলে গেছে। শায়েস্তা খানের আমলে বাংলায় মুঘল শাসনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত হয়।
বাংলার প্রাদেশিক গভর্নর বা সুবেদার নির্বাচিত হওয়ার আগে শায়েস্তা খান ছিলেন তখনকার প্রধান সেনাপতি ও শাহজাদা আজমের আত্মীয়। পরিবিবি ছিলেন শায়েস্তা খানের কন্যা।
Advertisement
মুঘল আমলের সম্রাটদের মুল বাসস্থান ছিল বড় কাটারায়। আর ছোট কাটারা ছিল মূলত গেস্ট হাউস। বাইরে থেকে অতিথি এলে ছোট কাটারায় আপ্যায়ন করা হত।
লালবাগ কেল্লার মধ্যে তিনটি স্থাপনা আছে। একটি মসজিদ, দরবার হল ও পরীবিবির সমাধি। লালবাগ কেল্লা হিসেবে যে ছবিটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় সেটি মূলত পরীবিবির সমাধিস্থল।
দরবার হলের দ্বিতীয় তলায় বিচার কার্য সম্পাদন করা হত। নিচতলায় আছে একটি সুড়ঙ্গ পথ। এই সুড়ঙ্গ পথ ধরে যাওয়া যেত নদীর ঘাটে।
কথিত আছে, এই সুড়ঙ্গ বুড়িগঙ্গা নদীর ওই পাড়ে গিয়ে মিশেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন এই সুড়ঙ্গ শেষ হয়েছে দিল্লিতে গিয়ে।
গেল কয়েক বছরে পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পে ফাটল ধরে কেল্লার দরবার হলে। বর্তমানে এর সংস্কার কাজ চলমান। ইউনেস্কোর অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যায়ে চলমান আছে এই সংস্কার কার্য।
সারাবছর এখানে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। অল্প কিছুদিন আগেও দরবার হল ও পরীবিবির সমাধিস্থলে দর্শকদের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও সংস্কার কাজ চলায় বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে।
সংস্কার কাজ শেষ হলে পুনরায় সেটি উন্মুক্ত করা হবে। প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয় লালবাগ কেল্লায়।
লেখক: ফ্রিল্যান্সার গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এমএস