পদ্মার তীব্র স্রোতে রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে ফেরিঘাটসহ ওই এলাকার শতাধিক বসতবাড়ি।
Advertisement
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজীপাড়া এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এতে সেখানকার পাঁচ থেকে সাতটি বসতভিটা মুহূর্তের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের অনেকেই বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, ভাঙন রোধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বালুর বস্তা ফেলছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে বালুর বস্তায় ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের। একমাত্র স্থায়ী বাঁধের মাধ্যমে ভাঙন রোধ সম্ভব বলে তাদের দাবি।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শারমিন বেগম বলেন, এখন তার ঘরের সঙ্গেই নদী। কয়েকজন ঘর ভেঙে সরিয়ে নিলেও তার জায়গা-জমি না থাকায় ঘর সরাতে পারছেন না। এর আগেও তিনবার ভেঙেছে। কিন্তু এখন কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। সরকার ভালো করে নদীশাসন করলে শেষ আশ্রয়টুকু রক্ষা হতো।
Advertisement
স্থানীয় নিছা বেগম, আব্দুর রহিম ও বাচ্চু খান জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু কেউ খবর রাখে না। সরকারের বড় বড় কর্মকর্তারা এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না। প্রতিবছর নদীর পানিতে হাবুডুবু খেতে হয়। এবং বাড়ি ভাঙে আবার অন্যত্র সরিয়ে নেন। জায়গা জমি না থাকায় এবার আর যাওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না। তাছাড়া ভাঙন আতঙ্কে দূরে কোথাও কাজেও যেতে পারেন না। কখন কী হয়। এভাবে থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও করাতে পারছেন না।
ঘাটের মুদি দোকানি হারুন ভূইয়া বলেন, এখন তো ফেরিঘাটসহ পুরো এলাকার ঘরবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘাটও বন্ধ। এখন তো ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে না। তাছাড়া অল্পকিছু বস্তা ফেলে বলা হয় অনেক বস্তা ফেলা হয়েছে। আসলে স্থায়ী কাজ না হওয়া পর্যন্ত তাদের শান্তি নেই।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের উভয় প্রান্তে ঘাট আধুনিকায়নের জন্য ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা করা হয়েছে। যার ডিজাইন এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় স্থায়ী কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে, রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার ঘাট প্রান্তে দুই ও দেবগ্রামের চার কিলোমিটারসহ ছয় কিলোমিটার এলাকায় ডিজাইন অনুযায়ী প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। অথচ পূর্বে বরাদ্দ হয়েছিল মাত্র ৫১০ কোটি। যার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের করা ডিজাইন বিআইডব্লিউটিএর কাছে হস্তান্তর করে তারা সেটি যাচাই-বাছাই করতে বুয়েটে পাঠায়, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন।
Advertisement
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া প্রান্তের সাতটি ঘাটের মধ্যে বর্তমানে ৩ ও ৫ নম্বর ঘাট দুটি ভাঙন সমস্যায় রয়েছে। ফেরিঘাট টিকিয়ে রাখতে জিও ব্যাগ দিয়ে তারা ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন। ৫ নম্বর ঘাটটি চলতি মাসের প্রথম দিকে এবং ৩ নম্বর ঘাটে আজ ভোর রাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খবর পাওয়ার পর সকাল থেকেই ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ আশা করছেন আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া এস্টিমেট ও ডিজাইন বুয়েটে পাঠানো হয়েছে, যেটা বুয়েট পর্যবেক্ষণ করছে। হয়তো আগামী সপ্তাহের মধ্যে বুয়েট সব ঠিকঠাক করে দেবে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।
রুবেলুর রহমান/এমআরআর/জিকেএস