অর্থনীতি

দফায় দফায় বাড়ছে গুঁড়া দুধের দাম

কয়েক মাস ধরে অস্থির দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়েছে খাদ্যপণ্য, প্রসাধনীসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে গুঁড়া দুধও। চলতি বছর চতুর্থ দফায় বেড়েছে পণ্যটির দাম। মার্চ, জুন ও আগস্টে তিন দফা বেড়েছিল দাম। সেপ্টেম্বরে এসে বেড়েছে ফের।

Advertisement

এ দফায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ডভেদে প্রতি কেজি দুধের দাম বাড়িয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, এক বছরে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। টিসিবির এই হিসাবে গুঁড়া দুধের নতুন বাড়তি দাম আসেনি। সেটি যুক্ত হলে বছরের মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি দাঁড়াবে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ ও শান্তিনগর এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুধের দাম বাড়ার বিষয়টি জানা যায়।

Advertisement

তারা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দোকানিরা বলছেন, বেশকিছু ব্র্যান্ডের বাড়তি দামের দুধ এরই মধ্যে বাজারে এসেছে। যাদের বাড়তি দামের দুধ এখনো বাজারে আসেনি সেসব কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরাও গুঁড়া দুধের দাম বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন>> দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

টিসিবি বলছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি গুঁড়া দুধের দাম ব্র্যান্ডভেদে ৬৯০ থেকে ৮৫০ টাকা, যা এক বছর আগে ৫৯০ থেকে ৬৭০ টাকার মধ্যে ছিল।

Advertisement

এদিকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো বলছে, বিশ্বব্যাপী দুধের চাহিদা ও দাম বাড়ার কারণে প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে বেড়েছে খরচ। এতে দুধের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি কোনো বিপণন কোম্পানির কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর এই সময় প্রতি টন গুঁড়া দুধের দাম ছিল আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার, যা গত এপ্রিলে সাড়ে চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়া গত এক বছরে জাহাজ ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেও বেড়েছে আমদানি ব্যয়। সব মিলে বাধ্য হয়ে গুঁড়া দুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ‘চিড়েচ্যাপ্টা’ ব্যাচেলররা

তবে এ কর্মকর্তার এপ্রিলে দেওয়া গুঁড়া দুধের দামের হিসাব সত্য হলেও পরবর্তীসময়ে দাম কমার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

বিশ্ববাজারে দুধের দামের তথ্য বিশ্লেষণকারী সংস্থা গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের তথ্য বলছে, এপ্রিলে প্রতি টন গুঁড়া দুধের দাম ছিল চার হাজার ৫৯৯ ডলার, যা এ বছরের সর্বোচ্চ। তবে এ দাম এরপর একমাসের ব্যবধানে ৫শ ডলার কমেছে। এরপর জুনের শেষ পর্যন্ত বেশ স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীসময়ে দ্রুত কমেছে। টানা কমে আগস্টের শুরুতে এসে দুধের দাম নামে তিন হাজার ৫২৪ ডলারে, যা এখন বেশ স্থিতিশীল। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে প্রতি টন গুঁড়া দুধের দাম ছিল তিন হাজার ৫৪৭ ডলার।

এদিকে অন্য নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যে দুধের এ মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যয় আরও বাড়াচ্ছে। সেগুনবাগিচা বাজারে ক্রেতা সালাম আকন্দ বলেন, যখনই দুধের প্যাকেট কিনি দেখি দাম আগের চেয়ে বেশি। তারপরও শিশুদের খাবারের জন্য কিনতে হয়। তবে এটি খুব কষ্টের। সোমা নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আগে সব সময় ঘরে দুধ থাকতো। এখন শুধু বিশেষ কোনো পদ রান্না করতে হলে দুধ কিনি। তাও ছোট প্যাকেট।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এসব পণ্যের দাম ঠিকঠাক সমন্বয় হয় না। দাম বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে, কিন্তু কমলে সেটা কোম্পানিগুলো সমন্বয় করে না। সেজন্য এ অবস্থা। এটা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দেখা দরকার।

এনএইচ/এএসএ/এমএস