পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ৩০, পুরুষ ১৭ ও শিশু ২১ জন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় নিখোঁজ চারজন। এদিকে, মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৮ জনের মরদেহ। তারা হলেন- শৈলবালা (৫১), সনেকা রানী (৫৫), হরি কিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র (১৫), ধৃতি রানী (১০), সজিব রায় (১০), পুতুল রানী (১৫), কবিতা রানী (৯), রত্না রানী (৪০), মালিন্দ্র নাথ বর্মন (৫৬), মণিভূষণ বর্মণ (৪৬), মুনিকা রানী (৩৬) ও দোলা রানী (৫)।
Advertisement
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই করতোয়ার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মরদেহ ভেসে উঠতে থাকে। এরপর করতোয়ার আউলিয়া ঘাট থেকে মাড়েয়া ও পাশের এলাকার শ্মশান ঘাটগুলোতে অধিকাংশ মরদেহ দাহ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড়ের ইতিহাসে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। হাঁটুজলের নদী হিসেবে পরিচিত করতোয়ায় ডুবে একসঙ্গে ৬৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা এটাই প্রথম।
মাড়েয়ার বাসিন্দা মজনু জানান, কোনোদিন তিনি এত মানুষের প্রাণহানি এই এলাকায় দেখেননি। তার ৩৪ বছরের জীবনে তো বটেই তার বাপ-চাচারাও এত মৃত্যু একসঙ্গে দেখেননি।
Advertisement
বোদা ময়দান দিঘীর খালপাড়া গ্রামের হিমালয় (৩৫) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। মহালয়ার দিন তিনি স্ত্রী স্বপ্না রানীকে নিয়ে নৌকাডুবির শিকার হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বেঁচে গেলেও হিমালয়কে গত তিনদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা। তার চাচাতো ভাই মলিন জানান, হিমালয় দেড় মাস আগে বিয়ে করেন।
বোদা উপজেলার সাকোয়ার হেমন্ত বর্মণও ওই নৌকার যাত্রী ছিলেন। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে গিয়ে দুলতে দুলতে একপর্যায়ে ডুবে যায় বলে জানান তিনি। এরপর কোনোমতে সাঁতরে নদী পাড়ে আসেন হেমন্ত।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসন গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, নিহত ৬৮ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার একজন, দেবীগঞ্জ উপজেলার ১৮ জন, বোদার ৪৪ জন, আটোয়ারীর দুজন এবং ঠাঁকুরগাও সদর উপজেলার তিনজন রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৩০, শিশু ২১ এবং পুরুষ ১৭ জন। তালিকাভুক্ত নিখোঁজের সংখ্যা চারজন। এই চারজনকে উদ্ধার করা গেলে উদ্ধার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
Advertisement
এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় ওই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনার পরপরই ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর নিখোঁজ থাকেন অর্ধশত নৌকার যাত্রী।
সফিকুল আলম/এমআরআর/এমএস