রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা-সংক্রান্ত শাখা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এ তথ্য জানিয়েছে। তবে সব থেকে বেশি সংকটে পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
Advertisement
এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিশাল অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ বিশাল অর্থায়নের সুবিধা পাবে বাংলাদেশও।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ম্যানিলা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আগামী তিন বছরে (২০২২-২৫) ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির প্রভাবের বিরুদ্ধে খাদ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশেসহ এডিবি’র সদস্যভুক্ত দেশগুলো।
Advertisement
এই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এডিবি এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এশিয়ায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ নিম্ন আয়ের। ফলে এ অঞ্চলে খাদ্যের দামের কারণে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব রয়েছে। এটা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফার্ম ইনপুট, খাদ্য উৎপাদন ও বণ্টন, সামাজিক সুরক্ষা, সেচ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যার সমাধান সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। এডিবি অন্যান্য কার্যক্রমে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে যা খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখে। যেমন-জ্বালানি শক্তি, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিবহন, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাত।
এডিবির ৫৫তম বার্ষিক সভায় এটির অনুমোদন করা হয়। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, বিশ্ব একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি সংকটের জন্য একটি সময়োপযোগী এবং জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এশিয়ার অনেক দরিদ্র পরিবারকে ক্ষুধার্ত ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অতি দরিদ্রের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংকট বাড়ছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নে আরও কাজ করতে হবে। উদীয়মান এবং ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রভাব কমাতে খাদ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
ইউক্রেন-রাশিয়ার আগ্রাসন খাদ্যের প্রধান উপাদান ও সারের সরবরাহ ব্যাহত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, করোনা সংকট এবং টেকসই কৃষি অনুশীলন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থা চাপে পড়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চল খাদ্য আমদানি ও বৈদেশিক সারের উপর নির্ভরশীল। সব ব্যবস্থায় ভেঙে পড়েছে। ইউক্রেন আক্রমণের আগেও এডিবির অনেক দেশে কিছু মানুষের পুষ্টিকর খাবারের অভাব ছিল। এখন এটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এডিবি জানায়, এশিয়ার দারিদ্র্য মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি, খাদ্য নিরাপত্তা সহায়তায় উন্মুক্ত বাণিজ্যকে উন্নীত করা হবে। এডিবি সহায়তায় খামারের উৎপাদন ও জীবিকা উন্নত করবে, সারের ঘাটতি কমিয়ে দেবে এবং দক্ষ ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। এডিবি অর্থায়ন খাদ্য উৎপাদন ও বণ্টনে বিনিয়োগে সহায়তা করবে, পুষ্টি বৃদ্ধি করবে এবং জলবায়ু মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
Advertisement
এ প্রোগ্রামের আওতায় সহায়তা চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি খাতের সহ-অর্থায়নে অতিরিক্ত পাঁচ বিলিয়ন সংগ্রহ করবে এডিবি। এডিবি খাদ্য নিরাপত্তায় বার্ষিক বিনিয়োগে দুই বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এডিবি। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এডিবি। বাংলাদেশসহ সংস্থাটির ৬৮টি সদস্য দেশ রয়েছে।
এমওএস/জেএস/জিকেএস