‘নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে ফিরেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছাদখোলা বাসে আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে মাথায় লেগেছে তিনটি সেলাই তবুও ঋতুর কোনো আফসোস নেই। জাতীয় দলের হয়ে খেলা ও সাফ জয়ের পিছনে অবদান রাখার পেছনে ঋতুর ছিল এক জীবন সংগ্রামের গল্প। সেই ব্যথার তুলনায় এ ব্যথা তো তুচ্ছই!
Advertisement
লেফট ব্যাক এবং লেফট উইঙ্গার দুই পজিশনেই চমৎকার খেলতে পারেন সুদর্শন ঋতু। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও সামাজিক নানা বেড়াজাল টপকে ঋতুপর্ণা চাকমা এখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী জাতীয় দলের ফুটবলার।
কখনও কখনও হাস্যোজ্বল ঋতুপর্ণা চাকমার মনে ভাসে বিষাদের ছায়া, একমাত্র ছোট ভাইকে হারিয়ে ঋতু যেন শূন্য একজন বোন, ফেসবুকে ভাইকে মিস করার স্ট্যাটাস দেন প্রায়ই। বাবাকে হারানো কষ্ট, ভাইকে হারানোর বেদনা ভুলে ঘুরে দাঁড়ান ঋতুপর্ণা, জয় করেন নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।
মোশারফ হোসাইনের কাছে একান্ত সাক্ষাতকারে ঋতুপর্ণা চাকমা জানিয়েছেন নানা বাধা-বিঘ্ন মাড়িয়ে সাফল্যের চূড়ায় ওঠার গল্প।
Advertisement
জাগো নিউজ: ফুটবলে আসার পিছনে কার অবদান বেশি ছিল? যার কারণে আপনি সাফ চ্যাম্পিয়ন ঋতু?
ঋতুপর্ণা চাকমা: জেঠু (বাবার বড় ভাই) আমাকে ফুটবল খেলতে অনুপ্রাণিত করেন সবচেয়ে বেশি। প্রথমে আমি তো খেলতেই চাইতাম না। জেঠুর জন্যেই আমার ফুটবলে আসা। শুধু তিনিই নন, তার সাথে অনেকে সংযুক্ত ছিলেন- তারাও আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। যাদের জন্য আমি আজকে ঋতু হয়েছি তাদের প্রতি সবসময় আমার কৃতজ্ঞতা থাকবে।
২০১৫ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, ঢাকায় জেঠু তার কাছের একজনের বাসায় রেখে আমাকে থাকা খাওয়ার সুযোগ করে দেন এবং সেখান থেকে খেলাধুলাসহ সবকিছুর করার সুযোগ পাই আমি।
জাগো নিউজ: শুনেছি অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়েছে আপনাকে। এসব বাধা পেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে কে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন?
Advertisement
ঋতুপর্ণা চাকমা: পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকায় বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছিলাম না। জেঠুসহ অনেকে এগিয়ে আসেন আমার জন্য। আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আজীবন এই কৃতজ্ঞতা থাকবে।
জাগো নিউজ: সাফ জয়ের পর বাড়ির মানুষরা কী বলছে?
ঋতুপর্ণা চাকমা: বাড়ি থেকে ফোন দিচ্ছে, উপজেলা থেকে ফোন দিচ্ছে। জেলা থেকে ফোন দিচ্ছে। সবাই অপেক্ষায় আছে, আমি কবে যাবো! সবাই শুধু ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করছে।
জাগো নিউজ: আপনি আসলে কতটা উন্মুখ হয়ে রয়েছেন বাড়ি যাওয়ার জন্য?
ঋতুপর্ণা চাকমা: আমার তো মনে হচ্ছে এখনই বাড়ি চলে যাই।
জাগো নিউজ: আপনার প্রিয় খেলেয়াড় কে, যাকে আপনি অনুসরণ করেন?
ঋতুপর্ণা চাকমা: ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়। তার খেলা বেশি দেখি এবং শিখিও।
জাগো নিউজ: এখন কি স্বপ্ন দেখেন নিজেকে নিয়ে?
ঋতুপর্ণা চাকমা: নিজেকে নিয়ে তেমন কোনো দেখার মতো স্বপ্ন নেই। শুধু এটুকু বলবো, বাংলাদেশকে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। দেশের হয়ে ভালো খেলতে চাই।
জাগো নিউজ : ছাদখোলা বাসে আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে ব্যথা পেলেন? এ নিয়ে কতটা ব্যথিত আপনি?
ঋতুপর্ণা চাকমা : এই ব্যথা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই, আক্ষেপ নেই। টিম আনন্দ করতে পেরেছে মানেই আমি আনন্দ করেছি।
আইএইচএস/