‘নগদ’র গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬৮ লাখ। উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৬৭ হাজার। ডিস্ট্রিবিউটর সংখ্যা ২০৮ জন। দৈনিক লেনদেন প্রায় ৯৫৩ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ৬ হাজার ২৩১ জন। পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ২ লাখ ৫৫ হাজার। দেশব্যাপী উপজেলা পর্যায়ে ৬০২টি ‘নগদ’ সেবাকেন্দ্ৰ। দেশব্যাপী ৪৬টি ‘নগদ’ সেবা সেন্টার রয়েছে।
Advertisement
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১০ম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপসচিব মো. শামছুল আলম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
‘নগদ’ কোনো রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। তবে ‘নগদ’ শুধু ডাক অধিদপ্তরের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ার করে উল্লেখ করে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়, সরকারি বিভিন্ন নিয়ম মেনে ৫১ শতাংশ রেভিনিউ গ্রহণের সুযোগ প্রাপ্ত হয় এটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠানোর মাধ্যমে ‘নগদ’ সেবা উদ্বোধন করেন।
‘নগদ’র সেবাগুলো হলো
Advertisement
ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, সেন্ড মানি, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, জিটুপি, মোবাইল রিচার্জ, করোনা টেস্টের ফি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি দেওয়া, অ্যাড মানি (ব্যাংক ও কার্ড থেকে), আয়কর দেওয়া, ডোনেশন, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম পেমেন্ট, ইএমআই কালেকশন, ই-কমার্স পেমেন্ট, রেলওয়ে টিকিট ফি পেমেন্ট, ইন্ডিয়ান ভিসা ফি পেমেন্ট।
‘নগদ’র উল্লেখযোগ্য অর্জন
ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরুর পরে অতি অল্পসময়ের মধ্যে নানাবিধ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং গ্রাহক ও পরিবেশবান্ধব নানাবিধ কৌশলের কারণে ‘নগদ’ দেশের সাধারণ জনগণের কাছে একটি জনপ্রিয় সেবা হিসেবে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। ২৪ ঘণ্টা গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে হটলাইন নম্বর ১৬১৬৭। বিগত ৩ অর্থ বছরে ‘নগদ’ সেবা থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ সর্বমোট প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভাতা বিতরণে সরকারের ব্যয় হ্রাস
Advertisement
সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট, প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন উপহার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভাতা বিতরণ কার্যক্রমে ডাক অধিদপ্তরের ‘নগদ’ সেবার ব্যবহারে ভাতা বিতরণ খরচ প্রতি হাজারে ২০ টাকার স্থলে ৭ টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী সরকারি সব বিতরণ কার্যক্রম 'নগদ' সেবার মাধ্যমে সম্পাদিত হলে শুধু বিতরণ ব্যয় থেকে প্রতি বছর একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
গ্রাহকের লেনদেন ব্যয় হ্রাস
একটি জাতীয় দৈনিকে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ‘নগদ’ এর সর্বনিম্ন ক্যাশ আউট চার্জ, সেন্ড মানি ও বিল পেমেন্ট ফ্রিসহ নানাবিধ সেবার কারণে দেশের প্রান্তিক জনসাধারণ এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
‘নগদ’র মাধ্যমে মাত্র দুই বছরের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে সাড়ে পাঁচ কোটি গ্রাহকের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়ন
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা এক কোটি চল্লিশ লাখ মায়ের ‘নগদ' মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এতে নারীর ক্ষমতায়নে ‘নগদ’ সহযোগী হিসেবে অংশ নিতে পেরেছে।
প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি
‘নগদ’ সেবার প্রবর্তনের পর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গ্রাহক, এজেন্টসহ সব ব্যবহারকারি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় ভূমিকা
করোনা টেস্টের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের (স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর) একমাত্র পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে ‘নগদ’।
গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষা
‘নগদ’ এর কার্যকরি ও আধুনিকতর ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' এর মাধ্যমে যেকোনো লেনদেনে ‘অস্বাভাবিকতা’ পরিলক্ষিত হলে, এর ব্যাপারে ‘ফ্ল্যাগ রেইজ' এর মাধ্যমে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সুচারুরূপে পালন করা সম্ভব হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে— সম্প্রতি ‘সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম’ ও ‘আলাদীনের প্রদীপ’ নামক প্রতিষ্ঠান দুইটির অস্বাভাবিক ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ এর বিষয়টিকে সঠিক সময়ে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকের গচ্ছিত অর্থের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেনগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরাবর রিপোর্ট করা সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন
ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়নের (ইউপিইউ) অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশের ডাকসেবাগুলো নিজেদের দেশে ‘নগদ’ এর আদলে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা দিয়েছে এবং সেসব ক্ষেত্রে ডাক অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা
ডাক বিভাগ কর্তৃক ‘নগদ’ সেবা চালুকরণ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপকের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও ডাক অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের সহায়তায় পরিচালিত ‘নগদ’ সম্পর্কে বিরুপ তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে সরাসরি ডিজিটাল সেবা ‘নগদ’ এর নানাবিধ সেবার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে আলোচনাক্রমে রাষ্ট্রের উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে ‘নগদ’র মাধ্যমে সরকারের সব লেনদেন পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেই সঙ্গে ‘নগদ’র মাধ্যমে অথবা ‘নগদ’র নাম ভাঙিয়ে কোনো ধরনের অসৎ উপায় অবলম্বন করলে কঠোরহস্তে দমনের সুপারিশ করা হয়।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোবাইল নম্বর নিশ্চিত না হলে কোনো অ্যাকাউন্ট করা সঠিক হবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসির টেলিকমের সমন্বয়ে ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’ গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠকে মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপস্থাপিত টেলিটক সম্পর্কে প্রতিবেদনে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়নি এবং সিনটেক্স সিস্টেম নামক কোনো প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সঙ্গে কাজ করেনি মর্মে জানানো হয়। টেলিটকের সেবার মানোন্নয়ন এবং ‘টাওয়ার শেয়ারিং’সহ ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা এবং অপরাজিতা হক বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/এমএএইচ/জিকেএস