আমাদের চারপাশে মুগ্ধ হওয়ার কতশত গল্প আছে, কত যে মমতার গল্প আছে, ইতিবাচক জীবনের গল্প আছে—আমরা ক’টা গল্পের খোঁজ রাখি? আমরা বিপুল কৌতূহল নিয়ে খোঁজ করি ভালোবাসাহীন কুৎসিত সব গল্পের। লেখক আবদুল্লাহ আল ইমরান তার কলমের নিপুণ আঁচড়ে তুলে ধরেছেন সেসব মায়া-মমতার, ভালোবাসার গল্প; যা আমরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। কিংবা এড়িয়ে যাই। আমাদের চোখে ধরাই পড়ে না।
Advertisement
অল্পবয়সে মা-হারা মেয়ে নূরী। মেলায় ঘোড়দৌড় দেখতে গিয়ে ঘটনাচক্রে শাহজালালের প্রেমে পড়ে। গভীর প্রেম হয় দু’জনের মাঝে। কিন্তু বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর! সহায়-সম্বলহীন শাহজালালের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় না নূরীর বাবা। তার বিয়ে হয়ে যায় প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে। রাগে, দুঃখে পাগল হয়ে যায় প্রেমিক শাহজালাল। তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। নূরী কি ভুলে যায় তার পাগল প্রেমিকের কথা? কতটুকু সুখী হতে পারে সে?
চানপুরার হাটে-ঘাটে একটি কথা বহুদিন ধরেই প্রচলিত, গাঁয়ের হিন্দুদের মন্দিরের নিচে নাকি রত্নভরা কলস পোতা আছে। হঠাৎই একদিন মন্দিরের মালিক কৃষ্ণ কোনো এক কারণবশত দেশ ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমায়। যাওয়ার আগে ভিটেমাটি বিক্রি করে যায় আশ্বাব তালুকদারের কাছে। তবে বিক্রি করেনি কেবল মন্দিরের জায়গাটুকু।
যাওয়ার সময় বলে যায়, ‘মন্দিরের যেন কোন অমর্যাদা করা না হয়।’ কোন অমর্যাদা হবে না বলে কৃষ্ণকে আশ্বাস দেয় আশ্বাব তালুকদার। কিন্তু তার দুই ছেলে রত্নের লোভে মন্দিরের আশেপাশে মাটি খোড়ে। রত্নভরা কলস না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মন্দির ভাঙচুর করে। কথিত মনসা দেবীর অভিশাপ নেমে আসে তাদের ওপর।
Advertisement
বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মতলেব আর তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বড়ভাই সোহরাব। শুরু হয় তাদের নতুন জীবন। এই জীবনে তারা মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে ঘুমাতে শেখে। এক কাপড় পরে কাটিয়ে দিলো দিনের পর দিন। কখনো কখনো না খেয়েও থাকতে হলো তাদের। হাজারো স্বপ্নভঙ্গ হলো মতলেবের স্ত্রী রাবেয়ার। কিন্তু একটি স্বপ্নকে কিছুতেই হারাতে দিলো না সে, একটি উঁচু দোচালা ঘরের স্বপ্ন। অনেক বছর পর তার এই স্বপ্ন পূরণ হলো।
আমরা খুব সহজেই যে কোনো মানুষ সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। না জেনে, না শুনে কঠিন সব মন্তব্য করে বসি। কিন্তু সবার বাস্তবতা কি এক? অস্বাভাবিক নির্দয় আচরণের খোলসে কেউ কেউ তো জীবনের নানা সীমাবদ্ধতা আড়াল করে, আড়াল করে লাল নীল বেদনাও। আমরা তার কতটুকু বুঝি? এই বইয়ে লেখক তার প্রাঞ্জল ভাষায় বলে গেছেন সেসব গল্প।
বইটি পড়তে গিয়ে কখনো ভেতরে জেগে ওঠে তীব্র হাহাকার। কখনোবা দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আশা করি উপন্যাসটি সবার ভালো লাগবে। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।
বইয়ের নাম: দিবানিশিধরন: উপন্যাসপ্রচ্ছদ: সানজিদা আবদুল্লাহপ্রকাশনী: অন্বেষা মূল্য: ৩০০ টাকা
Advertisement
এসইউ/জেআইএম