গত এক বছরে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে রিলায়েন্স গ্রুপের দায়িত্ব পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি। সেই সূত্রেই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৫তম বার্ষিক সাধারণ সভার পর মেয়ে ইশা আম্বানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রিলায়েন্স রিটেলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তিনি।
Advertisement
মূলত মুকেশ আম্বানি তার বিশাল সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব তার সন্তানদের ওপরই দিতে চাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে গত আগস্টে রিলায়েন্স গ্রুপের সাধারণ সভায় তিন সন্তানের নির্দিষ্ট ভূমিকার বিষয়টিও স্পষ্ট করেন তিনি।
মুকেশ আম্বানির যমজ সন্তান আকাশ ও ইশা আম্বানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের টেলিকমিউনিকেশন ও রিটেইল ব্যবসার নেতৃত্ব দেবেন। আর ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি সামলাবেন জ্বালানি ব্যবসা।
ভারতের করপোরেট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রত্যাশিত ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার সন্তানরাই হয়। রিলায়েন্স ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। আর সম্পদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মুকেশ আম্বানি অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা এড়াতে আগেভাগেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
Advertisement
২০ বছর আগে মুকেশ আম্বানির বাবা তার মৃত্যুর আগে নিজের সম্পদের কোনো উইল করে যাননি। সে কারণে বাবার সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করতে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় মুকেশ আম্বানির। এই ঘটনার কারণেই হয়তো মুকেশ আম্বানি চান না যে, তার সম্পদ নিয়েও সন্তানদের মধ্যে পরবর্তীতে কোনো বিবাদ শুরু হোক।
কোম্পানিতে ইশা আম্বানির নেতৃত্বের বিষয়টিও একটু ভিন্ন। কারণ আম্বানি পরিবারে এর আগে নারীদের নেতৃত্বের বিষয়টি খুব একটা দেখা যায়নি। বলা যায়, ছেলেদের পাশাপাশি মেয়ে ইশাকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। গত দুই দশকে ভারতের বিশিষ্ট শিল্প পরিবারগুলোতে মেয়েদের নেতৃত্বের বিষয়টি চোখে পড়ছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, আরও অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে হবে।
সামনের পরিকল্পনা সন্তানদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পাশাপাশি এখনও সমানতালে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ৬৫ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি। তিনি আগের মতোই রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তিনি চান তার সন্তানরা আরও দক্ষ হয়ে উঠুক। সেই সময় পর্যন্ত তিনি হয়তো নিজের দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন না।
ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কাভিল রামচন্দ্রন বলেন, এশিয়ার পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের সম্পদ ধরে রাখার যে মানসিকতা সেক্ষেত্রে মুকেশ আম্বানি অনেকটাই ব্যতিক্রম বলা যায়। তিনি এশিয়ায় পারিবারিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি নিজে উত্তরাধিকার নিয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সন্তানদের ক্ষেত্রে সেই পথটা মসৃণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
Advertisement
সূত্র: বিবিসি
টিটিএন