মতামত

গাভি ভেবে করেছিনু ভুল...

পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গেলো; আজ রাতেই কর্ম সংঘটন করতে হবে। কিন্তু দুধ পানাইয়া রাখমু কই? প্রশ্ন তুলল কায়দাপাড়ার সোলেমান। সোলেমানের প্রশ্ন শুনে চৌকির নিচ থেকে পানিশূন্য প্লাস্টিকের জগ বের করল গফরগাঁওয়ের শাহজাহান। শাহজাহানের কাণ্ড দেখে মুখ খুলল মুক্তাগাছার মোহাম্মদ আলী।

Advertisement

চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তর আর গাধার মধ্যে ডিফারেন্স হইল, গাধার কানগুলা বড় আর তর গুলা ছোট। ভর্ৎসনা শেষে শাহজাহানের ওপর থেকে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকাল সে। কপালে একাধিক রেখার ভাঁজ ফুটিয়ে তুলে, বারকয়েক মাথা দুলিয়ে বলল, বালতি দরকার।

বালতির ব্যবস্থা করা হলো। এরপর সে জানতে চাইল-: সরিষার তেল আছে কারও কাছে? কৌতূহল দেখাল শাহজাহান। জানতে চাইল-: তেল দিয়ে কী হবে? : তোমার চান্দিতে মালিশ করার জন্য। সরিষার তেল পাওয়া গেল না। টাঙ্গাইলের সামাদ কিছুদিন আগে বাড়ি ঘি এনেছে এক কৌটা। তারই খানিকটা পলিথিনের ঠোঙ্গায় ভরে বালতিতে রেখে মোহাম্মদ আলী ঘোষণা করল- : এবার চাই দড়ি। দড়ি কোনো দরকার- এ প্রশ্ন কেউ উত্থাপন না করায় মোহাম্মদ আলী খানিকটা হতাশ হলো। শেষে নিজে থেকেই ব্যাখ্যা প্রদান করল- পিছনের ঠ্যাং দুইটা মুড়াইয়া বাইন্দা দিমু, যাতে লাথি দিবার চান্স না পায়।কাপড় শুকানোর জন্য বারান্দায় টাঙানো নাইলনের রশি খুলে এনে মোহাম্মদ আলীর হাতে তুলে দিলাম আমি।

প্রস্তুতি সম্পন্ন, এবার অভিযানের পালা। মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আমরা স্পটে হাজির হলাম। অস্পষ্ট আলোয় কালো রঙের প্রাণীটিকে ক্যান্টিনের দক্ষিণ পাশে আমগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা গেল। দলনেতা মোহাম্মদ আলী চারদিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি প্রক্ষেপণ করে আর্তনাদ করে উঠল- বাছুর কই?

Advertisement

বাছুরের গতিবিধির ওপর নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শাহজাহানকে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে শাহজাহান জানাল- কিছুক্ষণ আগেও বাছুরকে সে এ জায়গায় বিচরণ করতে দেখেছে।

আর অহন সে বাইগন খাইতে গফরগাঁও গেছে- ভেংচি কাটল দলনেতা। বাছুর তালাসের দায়িত্ব শাহজাহানকেই দেওয়া হলো। বাছুরের দেখা পেলে তাকে কীভাবে এখানে নিয়ে আসতে হবে তার স্পেশাল ইনস্ট্রাকশন দিয়ে শাহজাহানকে হজরতের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো।

এখানে হজরতের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেওয়ার আবশ্যক বোধ করি। হজরত আলী আমাদের আনন্দমোহন কলেজের ইন্টারমিডিয়েট হোস্টেলের কেয়ারটেকার। তার দৈনন্দিন কাজের তালিকায় রয়েছে কারণে-অকারণে আমাদের ওপর খবরদারি করা আর হোস্টেল সুপার মজিবর রহমান খানের ফাই-ফরমাশ খাটা ও তার গৃহপালিত জীবজন্ত এবং বাগ-বাগিচার যত্ন-পরিচর্যা করা।

নানা কারণে হোস্টেল সুপারের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের সেই অসন্তোষের পাহাড়সম ক্ষোভ প্রশমনের আপাত কোনো রাস্তা যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন হঠাৎ একদিন উত্তেজিত কণ্ঠে মোহাম্মদ আলী বলল-: এক কাম করি।: কী কাম?: হোস্টেল সুপারের বিদেশি গাই আছে না একটা?: আছে। : হেইডা তো আমগর হোস্টেলের সামনেই রাইত-দিন ঘুরঘুর করে; ঘাষ খায়।: খায়।: বিদেশি গাইয়ের খাঁটি দুধ। ঠিক কি না?: ঠিক।: তাইলে আর বিলম্ব কীসের? প্ল্যান-প্রোগ্রাম কইরা চল কামে ঝাঁপাইয়া পড়ি... মোহাম্মদ আলীর পরিকল্পনা মোতাবেক আমরা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অথচ শুরুতেই বিপত্তি। বাছুর উধাও।

Advertisement

কিছুক্ষণ পর শাহজাহান ফিরে এলো বিধ্বস্ত অবয়বে। হজরতের বাড়ির আঙিনায় শুয়েছিল তার পোষা কুকুর। বাছুর ভ্রমে সেই কুকুরের লেজ ধরে টান দিতেই অবিবেচক কুকুর কামড়িয়ে-খাঁমচিয়ে শাহজাহানের অবস্থা ফর্দিফাই করেছে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে অপারেশন ব্ল্যাক কাউ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার দাবি জানালাম আমি। আমার আবেদনে সাড়া না দিয়ে দলপতি হুংকার ছাড়ল- তুই এই গাধাডারে লইয়া হাসপাতালে যা। আমি এর শেষ দেইখা ছাড়মু। হুঁ!

হাসপাতাল থেকে ফেরার পর টিভি রুমে সোলেমানের সঙ্গে দেখা হলো। বললাম- : আমগর দুধ কই?: দুধ নাই।: নাই কেন? বাছুরের সন্ধান পাওয়া যায়নি?: পাওয়া গেছিল।: তাইলে?: জেন্ডারে গোলমাল ঘটছে। : মানে?: মানে হচ্ছে, বাছুর সহযোগে গাভির কাছে যাওয়ার পর সরল বিশ্বাসে তার উলানে হাত দিয়ে দেখা গেল- তিনি গাভি নন; ষাঁড়।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর। basantabilas2021@gmail.com

এইচআর/ফারুক/জিকেএস