গ্রাহকদের টাকা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির নতুন পরিচালনা বোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদকে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের (কম্পানি কোর্ট) বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের চার পৃষ্ঠার লিখিত অনুলিপিতে গত ৩০ আগস্ট বিচারক স্বাক্ষর করেন। তবে আদেশের বিষয়টি মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) গণ্যমাধ্যমে আসে।
আদেশে আদালত বলেছেন, পরিচালনা পর্ষদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে রাখতে হবে। পাশাপাশি নতুন বোর্ডে ই-ক্যাবের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
Advertisement
হাইকোর্টের দেওয়া এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন (এফিডেভিট) আকারে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা চাইলে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে পারবেন এবং এ বিষয়ে বোর্ড সদস্যদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। এরপরই গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বোর্ডের পক্ষ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি জানানো হয়।
এরই মধ্যে ইভ্যালি থেকে পদত্যাগ করেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড। পদত্যাগ করা বোর্ড আগামীকাল বৃহস্পতিবার নতুন পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ইভ্যালির জন্য ১১ মাস আগে উচ্চ আদালতের গঠন করে দেওয়া পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানানো হয়। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) আদালতে এ পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।
Advertisement
এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন ওই পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদকে ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জয়েন স্টক একচেঞ্জের কাছে পাঠাতে বলেন। আর জয়েন স্টক একচেঞ্জ পরিচালনা বোর্ডের পাঠানো নাম তালিকাভুক্ত করে আদালতকে জানাবেন।
শামীমা নাসরিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের (কম্পানি কোর্ট) বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম মানসুম, তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহাসিব হোসেন। আর পরিচালা বোর্ডের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোরসেদ আহমেদ খান। অন্যদিকে নাসরিনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভেঅকেট শামীম আহমেদ মাহদী।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, আদালত নিযুক্ত বোর্ড শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আবেদনকারীদের নাম কোম্পানির রেজিস্টারে নিবন্ধন করতে সব প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্যে বলেছিলেন। এর আগে পরিচালণা বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত অডিট ফার্মকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইভ্যালির অডিট সম্পন্ন করতে বলা হয়েছিল। অডিট ফার্ম থেকে অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আদালত নিযুক্ত বোর্ড ইভ্যালি বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে নিজস্ব অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণসহ পরিচালনা বোর্ডের মতামত দিতে বলেছেন আদালত।
এরমধ্যে বোর্ড সভায় শামীমা নাসরিন, তার মা ও বোনের স্বামীকে ইভ্যালি পরিচালনার বোর্ড সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আদালত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইক্যাব সূত্রে জানা গেছে, এবার ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্ব আসছেন নতুন পাঁচজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তার মা ফরিদা আক্তার ও বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ। এছাড়াও থাকছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কাজী কামরুন নাহার ও ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।
ইভ্যালি পরিচালনার জন্য ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ওএসডিতে থাকা আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজকে বোর্ডের সদস্য করা হয়।
আদেশে বোর্ডের কাজ কী হবে তা-ও বলে দেওয়া হয়। কোম্পানির কোথায় কী আছে, সবকিছু বুঝে নেবে বোর্ড। কোম্পানি যেভাবে চলে সেভাবে প্রথমে বোর্ড মিটিং বসবে। সবকিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কোম্পানিটির চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য প্রসিড (প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া) করবে। আর চালানো সম্ভব হলে কোম্পানিটি চলবে।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস