ক্যাম্পাস

প্রশাসনিক ভবনে ‘হয়রানি’ বন্ধে আমরণ অনশনে ঢাবি শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনে হয়রানি বন্ধ, প্রশাসনিক ভবনের কাজকে গতিশীল ও সহজ করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।

Advertisement

নির্ধারিত সময়ে দাবি না মানায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন এই শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে অনশনে বসেন তিনি। তার দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষকদের কয়েকজনকেও এসে সংহতি প্রকাশ করেন।

ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের সেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিভাগে একবার ফলাফলে টাইপিং মিস্টেক হয়েছিল। এদিকে আমাদের পরীক্ষার রুটিনও হয়ে গেছে। কিন্তু রেজাল্ট না দেওয়ায় পরীক্ষায় বসা যাবে না এমন নিয়ম আছে। আমাকে আমার বিভাগের শিক্ষকরা দায়িত্ব দিয়ে ওখানে পাঠান। তারা বলেছেন, ‘খুব ছোট কাজ, একদিনেই হয়ে যাবে।’ কিন্তু রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে আসার পর তারা বললেন, ‘তিন মাস লাগবে!’ পরে এটা বিভাগে জানালে শিক্ষকরা দ্রুত সমাধান করেন। বৃত্তির টাকার জন্য আসছিলাম, ‘তারা বলেছেন ছয় মাস পর আসেন।’ এরকম অনেক বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে আমাদের।

Advertisement

অবস্থান থেকে সরাসরি অনশনের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাসনাত বলেন, আমি ৩০ আগস্ট এখানে ৮ দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। দাবিগুলো পূরণে উপাচার্যের কাছে যাই। স্যার সময় লাগবে বলে জানান। আমি ১০ দিনের সময় দেই। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৮ তারিখ আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। প্রশাসন থেকে বলা হয়, ‘আমার দাবিতে কারো কোনো সমর্থন নেই।’ এরপরের দিন আমি আবার অবস্থান নেই এবং দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করি। পাঁচ ঘণ্টায় ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী দাবির পক্ষে সই করেন।

ঢাবির এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমি আজ সকালে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে দেখা করি। তিনি এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপের কথা বলেননি। উপাচার্যের এই অসহযোগিতামূলক আচরণের প্রতিবাদে ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীর অবস্থান ও অনশনের বিষয়ে জেনেছি। একজন শিক্ষার্থী যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এরকম কর্মসূচি প্রশংসার যোগ্য। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তারা আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা তাদের দাবিগুলো শুনেছি। এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সেবা কার্যক্রম সহজ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। আবার অনেকগুলো চলমান। এর বাইরেও কেউ কোনো দাবি জানালে আমরা তা আমলে নেই। তাদের দাবির বিষয়ে আমরা বুঝিয়েছি। তারাও বুঝেছে। কিন্তু অনশনে গেছে এটা শুনিনি। প্রয়োজনে আমরা আবার তাদের সঙ্গে কথা বলবো।

Advertisement

৮ দফা দাবি

১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শিক্ষক এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে।

২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করতে হবে।

৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসের ভেতরের প্রতিটি রুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে।

৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।

৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত থাকতে পারবেন না।

৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যহানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার-লিফলেট এবং ব্যানার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

আল-সাদী ভূঁইয়া/জেডএইচ/এএসএম