দেশজুড়ে

শুকিয়ে যাওয়া তিস্তায় সেচ নিয়ে বিপাকে কৃষক

তিস্তায় উজানের পানির যে প্রবাহ অব্যাহত ছিল বাংলাদেশ অংশের সেটি ১০ দিনের মাথায় হঠাৎ করে কমে গেছে। ফলে রোববার তিস্তার পানি প্রবাহ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩শ থেকে ৪শ কিউসেকে। এতে করে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি বিকালে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২৮ জানুয়ারি তিস্তার এলাকায় ভরপুর পানি পাওয়া যায়।তিস্তার ভরপুর পানিতে উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক আশায় বুক বেধেছিল এবার সেচ মৌসুমে ভারত থেকে ভাল পানি পাওয়া যাবে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পাউবো কর্তৃপক্ষ সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করছিল। নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পর্যন্ত সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ করে। গত ১০ দিন  উত্তরাঞ্চলের ৭ উপজেলার ১২টি সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু রোববার থেকে পানি কমতে থাকায় নীলফামারীর ডিমলায় ৩টি ও জলঢাকার ২টি সেচ ক্যানেলে পানি দেয়া হচ্ছে। পানি স্বল্পতার কারণে চলতি বছর ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পানি প্রবাহ বৃদ্ধি হওয়ায় গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা হয়েছিল।গত ২৮ জানুয়ারি তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ১ হাজার ৪২১ কিউসেকে। গত ১০ দিনের পানি প্রবাহ গড়ে ১ হাজার ৩ কিউসেক পাওয়া যায়। কিন্তু শনিবার বিকাল থেকে পানি কমতে শুরু করে রোববার বিকালে মাত্র ৩শ কিউসেক নিচে নেমে আসে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৫ ফ্রেবুয়ারি তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারাজের ১টি গেট খোলা ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। গজলডোবা ব্যারাজের চোয়ানো পানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আকস্মিকভাবে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে খবর পাওয়া যায় তিস্তার উজানে ভারতের অংশে ব্যাপকভাবে বোরো ধানের চারা রোপণের কারণে গজলডোবার সকল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে তার প্রভাব বাংলাদেশ অংশের তিস্তায় এসে পড়েছে। যার কারণে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূল ক্যানেলে পানি রাখা হলেও শাখা ক্যানেলগুলোতে পানি দেয়া যাচ্ছে না। ফলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার সেচ নির্ভর বোরো আবাদে কৃষকদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে।ডিমলা নাউতরা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত ৮/৯ দিন থেকে তিস্তার ব্যাপক পানি পাওয়া গেলেও সোমবার থেকে পানি প্রবাহ নেই। এস-টু-টি সেচ ক্যানেলের কৃষক সমিতির সম্পাদক জিয়াউর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত বছর শুস্ক মৌসুমে সেচ নির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা নদীতে পানি সঙ্কটের কারণে খরিপ-১ মৌসুমে কৃষকরা রেশনিং সিস্টেমে ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেচ মৌসুম শুরুতে যে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে তা আরও ভয়াবহ হতে পারে। প্রধান ক্যানেলে ভরপুর পানি থাকলেও পানি প্রবাহ না থাকার কারণে শাখা ক্যানেলের উজানে পানি পেলেও ভাটিতে পানি পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, তিস্তার সেচ ক্যানেলের পানি সংরক্ষণ করার জন্য যে সিল্টট্রাপ রয়েছে সেটিও বর্তমানে পলিতে পরিপূর্ণ। ভারত সরকারের সঙ্গে তিস্তার ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি সরকারকে দ্রুত চুক্তি করতে হবে। তবেই সম্ভব উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি থেকে রক্ষা করা। খালিশা চাপানি বিরুপাড়া গ্রামের কৃষক অতিশ চন্দ্র জানায়, গত কয়েকদিন যে পানি পাওয়া যেত তাতে সমস্যা হতো না। কিন্তু সেচ কার্যক্রমের শুরুতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী জাগো নিউজকে বলেন, গত ১০ দিন থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ ভাল থাকার কারণে উত্তরাঞ্চলের ৩ জেলার ৭টি উপজেলায় ১২টি সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু শনিবার বিকাল থেকে পানি কমতে থাকায় শুধু নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকার ৫টি ক্যানেলে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে শনিবার থেকে কমতে শুরু করেছে। শনিবার পানি প্রবাহ ছিল ১ হাজার ১০৪ কিউসেক। রোববার পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বর্তমানে তিস্তার পানি প্রবাহের সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়ে অধিকাংশ সেচ ক্যানেলে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সূত্র মতে, হিমালয়ের চোলামু হ্রদ থেকে তিস্তার উৎপত্তি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৫শ ফুট উচ্চতায় এ নদীর উৎস। পাহাড়ী পানির ঢলও কমে গেছে তিস্তায়। এছাড়া তিস্তায় ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের পানির উপর নির্ভরশীল উত্তরাঞ্চরে লাখ লাখ কৃষকের ভাগ্য। ভারতের অংশের তিস্তার পানিতে ব্যাপকভাবে রোবো আবাদে সেচ সরবরাহ করার কারণে শনিবার থেকে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা নদীতেও পানি হ্রাস পেয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের সূত্র মতে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমবে বাড়বে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তারপরও তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ কমছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের জন্য ৫/৬ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন । জাহেদুল ইসলাম/এসএস/এসএম

Advertisement