ভ্রমণ

কেওক্রাডং পাহাড়ে কীভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন?

আসমা আকতার

Advertisement

পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকেই মুগ্ধ করে। বিভিন্ন পাহাড়ের রূপে মুগ্ধ হতে পর্যটকরা ছোটেন বান্দরবানে। তেমনই এক জনপ্রিয় পাহাড় হলো কেওক্রাডং। বাংলদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের পঞ্চম উচ্চতম এই পর্বত কখনো পর্যটকদের নিরাশ করে না। বিশেষ করে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের কাছে সেরা এক গন্তব্য এটি।

এর উচ্চতা ৯৮৬ মিটার (৩২৩৫ ফুট প্রায়, জিপিএস রিডিং থেকে প্রাপ্ত)। চারদিকে সবুজের সমারোহ আর বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে পাহাড় আর পাহাড়। ছোট-বড় পাহাড়, ঘন জঙ্গল ও নানা ধরনের পশু-পাখিতে পরিপূর্ণ এই দুর্গম এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

রোমাঞ্চপ্রিয়দের কাছে কেওক্রাডং এক ভিন্ন আকর্ষণের নাম। শীতকালে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী বহু পর্যটক এই পাহাড় দেখতে আসেন। দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়া শূন্যে মিলিয়ে আছে বলে মনে হলেও চূড়ায় উঠলে পাহাড় মেঘের মিতালী আপনাকে আন্দোলিত করবে মায়াবী আকর্ষণে।

Advertisement

এখানকার আকর্ষণের মধ্যে আছে- সবুজ পাহাড়ের তাক লাগানো সৌন্দর্য, ঝরনাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও পাহাড়ের উপর থেকে মেঘের লুকোচুরি।

সাদা মেঘে ঢাকা থাকায় দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়াকে ধোঁয়াটে মনে হয়। বাতাসের ঝাপটায় দাঁড়ানো দায়। বৃষ্টি-বাতাস-মেঘ সময় সময় দখল নেয় চূড়ার আশপাশ। মেঘ দেখতে এখন আর দেশের বাইরে দার্জিলিং বা মেঘলয়ে যেতে হবে না।

কেওক্রাডং পাহাড় দেখলে মনে হবে আপনি যেন মেঘের দেশে চলে গেছেন। বাংলাদেশের ট্র্যাকারদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হচ্ছে বগা লেক-কেওক্রাডং-জাদিপাই। ২-৩ দিন হাতে সময় নিয়ে অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত আর দুর্দান্ত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারবেন।

কীভাবে যাবেন?

Advertisement

কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। ঢাকা থেকে বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি (ফোর হুইল ড্রাইভ), বাস, সিএনজিতে রুমা যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ি বা জিপ রিজার্ভ করলে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকার মতো ভাড়া পড়বে, যা মৌসুম ও পর্যটকদের সমাগম ভেদে ভিন্ন হয়।

আর সার্ভিসের বাসে করেও রুমা যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। বাসের সিট তেমন ভালো মানের নয়। বান্দরবান শহর থেকে রুমা যেতে সময় লাগবে কমবেশি ২ ঘণ্টার মতো। রুমা নেমে সার্ভিসের চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমা বাজার, ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।

নিয়ম অনুযায়ী, রুমা বাজার থেকে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে আপনাকে গাইড নিতে হবে, দিনপ্রতি গাইড সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। বাজারে গাইড সমিতি আছে। তাদের কাছে গেলেই গাইড পাবেন। গাইডকে সঙ্গে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য নিবন্ধন করতে হবে।

বড় দল গেলে আগে থেকে একটি কাগজে সবার নাম, ঠিকানা, পেশা, ফোন নম্বর ও বাসায় যোগাযোগের নম্বরসহ একটি তালিকা প্রস্তুত করে নিয়ে যেতে পারেন।

যেহেতু পাহাড়ি পথে হাঁটতে (ট্রেকিং) হবে তাই বিশেষত বৃষ্টির দিনে আপনাকে অবশ্যই ট্রেকিংয়ের উপযুক্ত জুতা পরতে হবে। তেমন জুতা সঙ্গে না থাকলে রুমা বাজার থেকে ট্রেকিংয়ের উপযুক্ত রাবারের স্যান্ডেল কিনে নিতে পারেন। দোকানে গিয়ে পাহাড়ে ওঠার জন্য ভালো স্যান্ডেল বললেই তারা বের করে দেবে আপনাকে।

রুমা বাজার থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথ হলো রুমা বাজার থেকে বগা লেক। সেখান থেকে কেওক্রাডং। সাধারণত দু’ভাবে রুমা বাজার থেকে বগা লেক যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ি ও ঝিরি পথে হেঁটে।

রুমা বাজার থেকে সার্ভিসের কিংবা রিজার্ভ চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে বগা লেক বা বগা লেকের কাছাকাছি যতদূর গাড়ি যায়। শীতকালে চান্দের গাড়ি বগালেক পর্যন্তই যায়, বর্ষায় চান্দের গাড়ির শেষ গন্তব্য থাকে কমলা বাজার পর্যন্ত।

বাকি পথটুকু পায়ে হেঁটে যেতে হয়। চান্দের গাড়ি রিসার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ২২০০-২৫০০ টাকা আর সার্ভিসের গাড়িতে ১৫০-২০০ টাকা জনপ্রতি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক গাড়ি যাত্রার পর কমলা বাজার এসে পোঁছাবেন।

এরপর আপনাকে পায়ে হেঁটে (ট্রেক করে) বগালেক উঠতে হবে। তবে যারা পাহাড়ে প্রথমবার উঠবেন, তাদের জন্য কষ্টের হবে। কেওক্রাডংয়ের পথে ট্রেক করার প্রাকপ্রস্তুতিও হয়ে যায় বটে।

আধা ঘণ্টা (ধীরে হাঁটলে ১ ঘণ্টা) ট্রেক করে পৌঁছে যাবেন পাহাড়ের উপরের অনিন্দ্য সুন্দর বগালেকে। সাধারণত এ যাত্রায় পর্যটকগণ বগালেকে রাত যাপন করেন।

কোথায় থাকবেন?

আপনি বগালেকে রাত যাপন করবেন। গাইডই আপনার জন্য কটেজ ঠিক করে দেবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বিভিন্ন কটেজ আছে এখানে একতলা দু’তলা।

তবে সিয়াম দিদির কটেজের ভালো নামডাক আছে। আর যদি কেওক্রাডং রাত যাপন করতে চান, তাহলে কেওক্রাডং চূড়ায় ওঠার আগেই একটা রেস্টুরেন্ট পাবেন, তাদের কাছে বললে ব্যবস্থা করে দেবে। ভাড়ার হিসাব বগালেকের মতোই।

কোথায় খাবেন?

আপনি যে কটেজে থাকবেন, সেখানেই খেতে পারেন। অথবা গাইডকে বললে মুরগির ব্যবস্থা করে দেবে। চাইলে নিজেরাও রান্না করতে পারেন। খাবার জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা পড়বে। বগালেক ছাড়াও আপনি কেওক্রাডংয়ে দুপুরে খেতে পারবেন। খাবারের নিয়ম, মান, দাম একই বগালেকের মতো।

এ ছাড়া বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে কয়েকটা পাড়া পাবেন। সেখানেও কিছু খাবারের দোকান পাবেন। যেমন- চা, কলা, রুটি ও পাহাড়ি ফল পেঁপে, কমলা খেতে পারবেন।

 

কেওক্রাডং পাহাড় সত্যি অসাধারণ একটি স্থান। এটি বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ।

জেএমএস/এসইউ/এএসএম