জীবনের তাগিদে অথৈ সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ৫৭ মাঝি-মাল্লা। বাতাসের তোড়ে সীমানা ভুলে ঢুকে পড়েছিলেন ভারতের জল সীমায়। এ অপরাধে ভারতীয় কোস্টগার্ড দুটি ফিশিং বোটসহ তাদের আটক করে সোপর্দ করেছিল থানায়। এরপর থেকে ভারতের কলকাতার অলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ৫৭ জন মাঝি-মাল্লা। তাদের বন্দি জীবনের সাজার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১০ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং নোয়াখালী জেলার পৃথক থানা পুলিশ তাদের ব্যাপারে ইতিবাচক তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে। কিন্তু সঠিক সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন ভারতের কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় সাজা ভোগের পর পরই এসব মাঝি-মাল্লাকে দেশে ফেরত আনা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পরিবার সদস্যরা ফিশিং ট্রলারসহ বন্দিদের সহসা দেশে ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ঠদের সহযোগিতা চেয়েছেন।বন্দিদের বরাত দিয়ে পরিবার সদস্যরা জানান, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর ‘এফবি সাঈদ হোসেন ও এফবি জেড রহমান’ নামের দুটি ফিশিং ট্রলারে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ৫৭ জন মাঝি-মাল্লা। তাদের মধ্যে ৫৪ জনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। অপর তিনজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। প্রবল বাতাসে সাগরের মাঝখানে পথ হারিয়ে ফেলেন দুটি ট্রলারের মাঝি-মাল্লারা। ভুলে তারা ঢুকে পড়েন ভারতের জলসীমায়। ভারতের কোষ্টগার্ডের সদস্যরা তাদের ফিশিং ট্রলারসহ আটক করে সোর্পদ করেন কলকাতার প্যাজারগঞ্জ কোস্টাল থানায়। ওই সময় কোস্টগার্ড বাদী হয়ে ৫৭ মাঝি-মাল্লা ও ফিশিং ট্রলারের বিরুদ্ধে মামলা করেন থানায়। পরে তাদের পাঠানো হয় দক্ষিণ ছব্বিশ পরগুনার আমলী আদালতে। তারা আরও জানায়, ভারতের আদালত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৫৭ মাঝি-মাল্লাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ওই সময়। আদালতের দেয়া এই সাজার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। বর্তমানে এসব মাঝি-মাল্লারা কলকাতার অলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মানবেতর জীপনযাপন করছেন। এদিকে সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও ভারতের কারাগার থেকে তাদের সহসা দেশে ফেরত আনতে পারবে না কিনা তা নিয়ে চরম উদ্বেগ ও অনিশ্চিয়তায় রয়েছে তাদের পরিবার ও স্বজনরা। স্বজনদের দাবি, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলাদা আলাদা তদন্তের মাধ্যমে আটক মাঝি-মাল্লাদের নাগরিকত্ব পরিচয়ের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ধীরে চলো প্রদক্ষেপের কারণে প্রতিবেদনের কপি এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেনি বলে দাবি তাদের। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে কিছুই জানাতে পারছে না।চকরিয়া উপজেলার ফিশিং ট্রলার মালিক সেলিম উদ্দিন জানান, ভারতে কারান্তরীণ ৫৭ মাঝি-মাল্লাসহ ফিশিং ট্রলার দুটি দেশে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে এসব মাঝি-মাল্লার পরিচয় সনাক্তের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, গতমাসে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘুরে তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারতের কারাগারে আটকদের বিষয়ে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/আরআইপি
Advertisement