জাতীয়

কুড়িয়ে পাওয়া ফল বিক্রি করে সংসার চলে ফাতেমাদের

ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। বাদামতলী ওয়াইজঘাটে নিত্যদিন তার যাত্রা। ভোর হলেই ছুটে যান দেশের বৃহত্তম ফলের আড়ত বাদামতলীতে। সেখান পড়ে থাকা পচা, আধপচা ফল সংগ্রহ করেন। পরে কুড়িয়ে পাওয়া এসব ফল কখনো রাস্তার পাশে, কখনো বা নিজ এলাকায় বিক্রি করেন ফাতেমা বেগম। আর সেই ফল বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

Advertisement

শুধু ফাতেমা নন, তার মতো আরও অনেকেই দেশের বিখ্যাত ফলের আড়ত বাদামতলীতে এসব ফল সংগ্রহ করেন। সেখানে গভীর রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফলের গাড়ি আসতে শুরু করে। রাতভর চলে গাড়িতে ফল লোড-আনলোডের কাজ। দিনের বেলা শুরু হয় নিলামে ফল বিক্রি। আর এসময় ফেলে দেওয়া ও গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া পচা-আধপচা ফল কুড়িয়ে নেন ফাতেমারা।

ফাতেমার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। বলেন, ভোর হলেই ওই পাড় থেকে বাদামতলী আসি। রাতে গাড়ি থেকে ফল নামানোর সময় নিচে পড়ে থাকে, সেগুলো খুঁজতে থাকি। মাঝে মাঝে ভালো ফলও পড়ে থাকে। বেশিরভাগ আধপচা ফল পাই। এছাড়াও বাদামতলী ও ওয়াইজঘাটের বড় বড় আড়তে ঘুরে ফেলে দেওয়া ফল খুঁজতে থাকি।

গাড়ির নিচ থেকে ফল কুড়াচ্ছেন আরেক নারী

Advertisement

ফাতেমা বেগম আরও বলেন, ফল কুড়াতে গেলে অনেক দোকানদার খুশি হয়েই দু/একটা ফল দেন। দুপুর হলে এসব ফল এলাকায় নিয়ে যাই। সেখানে অলি-গলির বাজারে বিক্রি করি।

কেরানীগঞ্জের আরেক বাসিন্দা রানু আক্তার। বাদামতলী আর ওয়াইজঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া ফল বিক্রি করে সংসার চালান তিনিও। রেনু আক্তার বলেন, আড়ত থেকে ফল ক্রয় করে বিক্রি করার টাকা নেই। ওয়াইজঘাট আর বাদামতলীতে কুড়িয়ে যা পাই তাই বিক্রি করি, নিজেরা খাই।

কুড়িয়ে পাওয়া পচা-আধপচা ফল কিনে বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা

কুড়িয়ে পাওয়া এসব ফলের ক্রেতা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পচা অংশটুকু ফেলে দেই। রাস্তার পাশে বিভিন্ন ফলের রস মিশিয়ে শরবত বিক্রি করেন, তারা কেনেন। এলাকার নিম্ন আয়ের বাসিন্দারাও কেনেন।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা পাড়ের ওয়াইজঘাট থেকে শুরু করে বাদামতলী পর্যন্ত ফলের আড়ত ও খুচরা দোকান। প্রতিদিন কয়েক টন দেশি-বিদেশি ফল আসে সেখানে। আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে নিয়ে যান। রাত-দিন চলে গাড়ি থেকে ফল লোড-আনলোড আর বেচাকেনার কর্মযজ্ঞ। কাভার্ড ভ্যান থেকে ক্যারেটের পর ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি) ফল মাথায় করে আড়তে আনা নেওয়া করেন শ্রমিকরা। আর এসময় পড়ে যাওয়া ও ফেলে দেওয়া ফল খোঁজেন ফাতেমা বেগম-রেনু আক্তারের মতো অনেকে। এছাড়াও আড়তগুলোতে ঘুরে ঘুরে ফল কুড়ান তারা। কখনো কখনো আড়তদারদের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে ফল নিতেও দেখা যায় তাদের।

বাদামতলীর আড়তে ফল লোড-আনলোডে ব্যস্ত শ্রমিকরা

আহসান মঞ্জিলের সামনে আধপচা, এক তৃতীয়াংশ পচা মাল্টা ও আপেল বিক্রি করেন হারিছ উদ্দীন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গাড়িতে করে যে ফলগুলো আসে, এগুলোর মধ্যে সব পুরোপুরি ভালো থাকে না। ক্যারেটের মধ্য গরমে বা যানজটে এক/দুইদিন আটকে থাকার কারণে দাগ পড়ে যায়, নরম হয়ে যায়। সেসব ফল পাইকারি বিক্রেতারা কম দামে বিক্রি করে দেন। আমরা সেগুলো কিনে নেই। পরে আমরা সেগুলো ভালো ফলের চেয়ে অর্ধেক বা অর্ধেকের কম দামে বিক্রি করি।

এসব ফলের বেশিরভাগ কিনে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন শরবতের দোকানি, নিম্নবিত্ত মানুষ। যোগ করেন তিনি।

বাদামতলীর সাথী ফ্রেশ ফ্রুটস আড়তের বিক্রেতা রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাক-পিকআপ থেকে ফল নামানো ও উঠানোর সময় ফল পড়ে যায়। আর সেগুলো হকাররাসহ অনেকে কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি করেন।

ইএ/জিকেএস