এম মাঈন উদ্দিন
Advertisement
বায়ান্ন বাঁকের বড়দারোহাট-বেড়িবাঁধ সড়ক অতিক্রম করে দেখা মিলবে বিশাল সমুদ্র সৈকতের। শোনা যাবে সাগরের গর্জন। দখিনা মিষ্টি হাওয়ায় শরীরটা শীতল হয়ে যাবে। উত্তরে দু’চোখ যতটুকু যাবে দেখা মিলবে সৈকতের, দক্ষিণে কেওড়া গাছের সবুজ বাগান। পশ্চিমে শুধু সাগর আর সাগর।
চোখে পড়বে দুষ্ট ছেলেদের সাগরের স্বচ্ছ পানিতে লাফালাফি দৃশ্য। ঘাটে আছে সারি সারি ডিঙ্গি নৌকা। জেলেরা কেউ মাছ ধরে সাগর থেকে ঘাটে ফিরছে, কেউ আবার সাগরে যাচ্ছে। এমন নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কাজ শুরু করার পর মেরিনড্রাইভের বাঁধ নির্মাণের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে সমুদ্র সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার একেবারে দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত এই স্পটের নাম ‘ডোমখালী সমুদ্র সৈকত’। ‘ডোমখালী বিচ’ নামেও এটি পরিচিত।
Advertisement
শুধু দিনে নয়, রাতেও সাগর পাড়ে দেখা মেলে অসংখ্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারের। রাতে বেলায় বিশাল সমুদ্রের গর্জন কান পেতে শুনে সেখানে ছুটে যান তরুণরা। পূর্নিমার রাতে সেখানে তরুণদের ঢল নামে। মিরসরাই থেকে এই সমুদ্র সৈকতের দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার।
অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা মিরসরাই উপজেলার একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সাগর। ভ্রমণপিপাসুরা চায় এমনই একটি স্থান। আঁকা বাঁকা পথে পাহাড় ভ্রমণ কিংবা সাগর দুটোই ভালো লাগে। কোলাহল মুক্ত সাগরের খোঁজে ছুটে চলেন ভ্রমনপিপাসুরা।
উপজেলার শাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় সমুদ্র সৈকতের আবিষ্কার করছে স্থানীয় ভ্রমণপিপাসুরা। যা এরই মধ্যে ‘ডোমখালী সমুদ্র সৈকত’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ডোমখালী পুরোনো সুইসগেট থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মোহনায় নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি সুইসগেট। যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সাগরের পানি। এর একটু উত্তরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। নির্মাণ করা হয়েছে আরো একটি বেড়িবাঁধ। মূলত বেড়িবাঁধের পুর্বাংশে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা।
Advertisement
আর এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত পর্যটক। দেখতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের এর মতো ডোমখালী সমুদ্র সৈকত।
নতুন নির্মিত বেড়িবাঁধ জুড়ে সবুজের সমারোহ, পাখিদের কোলাহল, কিছুদূর পর পর সাগরের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছোট ছোট খালের অবিরাম বয়ে চলা, বাঁধের পূর্বে গ্রামীণ জনপদ আর দক্ষিণে সাগরের কোল জুড়ে ম্যানগ্রোভ বন।
এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। কিছুদূর পার হলে শোনা যায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের গর্জন। খেজুর, নারকেল আর ঝাউ গাছের সারি। বিস্তৃত চরজুড়ে কেওড়া গাছের সমহার। আছে হরেক রকমের বৃক্ষ। পথে পথে দেখা মিলে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
সুইসগেট ঘেঁষে জেলেদের ব্যস্ততা, সাগর থেকে মাছ নিয়ে ফেরে জেলেরা। কেউ জাল বুনে অবসরে, কেউ আবার উত্তাল সাগরে নৌকা ভিড়ায়। লাল কাঁকড়া, সাগরের বিভিন্ন জাতের কাঁকড়া ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে মুখ তুলে থাকে। সবুজ বনায়নজুড়ে হরিণের পায়ের পদচিহ্ন।
কখনো কখনো দেখা মিলে হরিণেরও। সন্ধা হলেই শোনা যায় শিয়ালের ডাক। শীতের মৌসুম খেজুরের মিষ্টি রসের স্বাদ, আর মহিষের দুধের চা খেয়ে মুহুর্তেই দূর হবে শরীরের ক্লান্তি। সকালের সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে সাগরের ঢেউ। বিকেলে মিষ্টি রোদ আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্য মন কেড়ে নেবে যে কারো।
এই সৈকতে ঘুরতে আসা মির্জা মোহাম্মদ আরিফ ও ইকবাল হোসেন নামে দুই বন্ধু বলেন, ‘মিরসরাইয়ে এতো সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে তা ভাবতেই ভালো লাগছে। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ, পাখির কলকাকলী, বিশুদ্ধ বাতাস, লাল কাঁকড়া, বনের ভেতর হরিণের আনাগোনা আর নৌকা ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ।’
‘আমরা একটু সময় পেলেই এখানে ছুটে আসি। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে ভালো হতো।’ তাদের দাবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি সুনজর দেন তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে স্থানীয়সহ পর্যটকদের সুবিধা বাড়বে।
স্থানীয় ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভের বাঁধের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে সমুদ্র সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছেন। তবে মেরিন ড্রাইভ এখনো পুর্নাঙ্গ নির্মাণ হয়নি। পুর্নাঙ্গ হয়ে গেছে সৈকতের সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে ‘
তিনি আরো বলেন, ‘পর্যটন কর্পোরেশন যদি এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন করে তাহলে এটি কক্সবাজার কিংবা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। সরকারের এখান থেকে রাজস্ব আয়ের সুযোগ আছে।’
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট নেমে সিএনজি যোগে একেবারে সাগরপাড়ে যাওয়া যাবে। জনপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া নেবে।
রিজার্ভ নিলে পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। এছাড়া নিজামপুর কলেজের সামনে নেমে সেখান থেকেও সিএনজি যোগে যাওয়া যাবে। তবে এক-দুজন হলে মোটরসাইকেলেও যেতে পারে।
থাকবেন ও খাবেন কোথায়?
ডোমখালী সমুদ্র সৈকত এলাকায় থাকা ও খাওয়ার জন্য এখনো কোনো রেস্টুরেন্ট বা আবাসিক হোটের গড়ে ওঠেনি। খাবারের জন্য ছোট কমলদহ বাজারের বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল আছে। যা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।
থাকার জন্য পর্যটন এলাকা থেকে ঘণ্টাখানেকের দুরত্বে চট্টগ্রাম শহরের একেখাঁন মোড়ে মায়ামী রিসোর্ট ও অলংকার মোড়ে রোজভিও, সুইটড্রিম আবাসিক হোটেল আছে।
জেএমএস/জিকেএস