মতামত

রমিজ রাজা, জন্মই যার আজন্ম বাঙালি বিদ্বেষ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতই এগিয়ে চলেছে পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজার বাঙালি তথা বাংলাদেশ বিদ্বেষ ধারালো হয়ে উঠছে ততই। পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার  রমিজ রাজা বিষ মাখানো কথার ছুরি দিয়ে বিরামহীনভাবে বিদ্ধ করে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের। চলতি পিএসএলে পুরস্কার মঞ্চে বিশ্ব মাতানো সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল খানকে নিয়ে এই পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকারের চূড়ান্ত অভব্যতা  নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ‘কয়লা ধুইলেও যায় না ময়লা’- সেই প্রবাদটির কথাই।আন্তর্জাতিক আঙিনায় বাংলাদেশের উত্থানের শুরুর সময় থেকে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই, কিন্তু পাল্টাননি রমিজ রাজা। ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে আলোচনায় চলে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে টাইগাররা ক্রিকেট দুনিয়াকে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি দেয় ২০০৩ সালের পাকিস্তান সফরে। তিন টেস্টের ওই সিরিজে পেশোয়ারে দ্বিতীয় টেস্টে হারলেও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড নিয়েছির ৬৬ রানে। মুলতানে তৃতীয় ও শেষ টেস্টে বাজে আম্পায়ারিং আর স্বাগতিকদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে জয়ের সুবাস ছড়িয়েও হেরে যায় বাংলাদেশ। মূলত ওই সিরিজেই রমিজের ভণ্ডামি চলে আসে সামনে। মুলতান টেস্টে কমেন্ট্রি বক্সে বাংলাদেশকে নিয়ে রমিজের একের পর এক পিত্তি জ্বালানো মন্তব্য আর তার প্রতিবাদে আমাদের আতহার আলী খানের পাল্টা জবাব, ওই টেস্টের উত্তাপকে বাড়িয়ে দিয়েছিল আরও। বলাবাহুল্য মুলতান টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের লিড পেয়েছিল হাবিবুল বাশার সুমন ও তার সহযোদ্ধারা।মুলতানে পুরো ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে কোণঠাসা ছিল পাকিস্তান। হারের মুখে দাঁড়িয়ে দিক-বিদিক অবস্থা হয়েছিল স্বাগতিকদের। মাটি থেকে বল কুড়িয়ে অলক কাপালিকে আউট করলেন পাকিস্তান অধিনায়ক রশিদ লতিফ।  ফিক্সিং আর নানাবিধ কেলেঙ্কারিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেটে মি. ক্লিনম্যান নামে  একটা বিশেষ পরিচিতি ছিল রশিদ লতিফের। অথচ সেই লতিফই চরম জোচ্চুরি করলেন। যতদূর মনে পড়ে প্রতারণার দায়ে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন লতিফ। মজাটা হচ্ছে, লতিফের জোচ্চুরি নিয়ে যখন সবাই সোচ্চার তখনও মাইক্রোফোনে লতিফের এই অপকর্মকে ডিফেন্ড করে গেছেন রমিজ। ম্যাচে বাংলাদেশ হারলো ১ উইকেটে। বেশ গর্ব গর্ব মুখ করে কানঢাকা রমিজ (ততক্ষণে বাংলাদেশে পেয়ে গেছেন কান কাটা খেতাব) বললেন’ দিন শেষে জিতল সেরা দলটাই। অভিনন্দন বিজয়ীদের...।’ আবেগ চেপে রেখে শান্তভাবে আতহার জবাব দিলেন- ‘পাকিস্তান সেরা দল তবে এই ম্যাচে সেরা ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ।’ ওই টেস্টেও শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলার মোহাম্মদ রফিক বল ডেলিভারি দেয়ার আগেই রান নেয়ার জন্য  ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান ননস্ট্রাইকিং এন্ডে থাকা উমর গুল। সুযোগ থাকলেও স্পোর্টসমানশিপের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গুলকে রান আউট করেননি রফিক।  দলের হার মেনে নিয়েও ক্রিকেটকে জেতালেন রফিক। এনিয়ে টু শব্দও করেননি রমিজ ও আরেক পাকিস্তানি ধারাভাষ্যকার আমির সোহেল। চরম প্রতারণার কৌশল নিয়ে বাংলাদেশকে হারানোর বিকৃত উল্লাসে মেতে ওঠেন রমিজ গংরা।বাংলাদেশকে নিয়ে রমিজের চরম আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে লিখতে গেলে হয়ে যাবে একটা উপাখ্যান। তবে দু একটি কথা না বললেই নয়। ধরা যাক গত বিশ্বকাপের (২০১৫ বিশ্বকাপ) কথাই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মুখোমুখি হল বাংলাদেশ। কমেন্ট্রি বক্সে রমিজ। শুরু থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে সব আপত্তিকর মন্তব্য করা শুরু করলেন এই ধারাভাষ্যকার। বললেন, বাংলাদেশের চেয়েও ভাল ক্রিকেট খেলে আফগানরা। সব দিক থেকেই বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তান  এগিয়ে.. ইত্যাদি ইত্যাদি। ম্যাচে আফগানদের ১০৫ রানে হারিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলেন মাশরাফি মর্তুজার দল। তাতেও শিক্ষা শিক্ষা হয়নি রমিজের। বাঙালি তথা বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে যে বিরোধিতা করতেই হবে রমিজকে! তার সব থেকে আপত্তিকর এবং হাস্যকর মন্তব্য বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিবেশ নিয়ে। কি ভয়াবহ ঔদ্ধত্য! রমিজের ভাষায়-‘ক্রিকেটের জন্য মোটেও আদর্শ জায়গা নয় বাংলাদেশ। বলতে গেলে ক্রিকেটের কোনো পরিবেশই নাই সেখানে। জ্যামের কারণে ঠিকমত মাঠে পৌঁছানো যায় না.. ইত্যাদি ইত্যাদি..’। ক্রিকেটের দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বব্যাপি। কিংবদন্তির ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হয়ে পড়েন আবেগাক্রান্ত, সেখানে একটা পরিত্যক্ত দেশের প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিবেশ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার দুঃসাহস দেখায় রমিজ!সম্প্রতি  পিএসএলে পুরস্কার মঞ্চে তামিমের ইংরেজি মান নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন রমিজ। তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-‘আমি তোমাদের বাংলা ভাষা জানি না। ইংরেজি চলবে তো?’ তামিম, সাকিব-মুশফিকদের মত ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এমন কয়জন ক্রিকেটার আছে পাকিস্তানে? আর সব থেকে বড় কথা ক্রিকেট খেলতে হলে ইংরেজি জানতেই বা হবে কেন? পাকিস্তানের কিংবদন্তির ব্যাটসম্যান ইনজামাম উল হক তো একেবারেই ইংরেজি পারতেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে আসার পর একটা লম্বা সময় শহিদ আফ্রিদির ইংরেজি জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিল, ইয়েস, নো ভেরি গুড লেভেলে। তাতে কি ইনজামাম, আফ্রিদিদের ব্যাটিং উপভোগ করতে কোনো সমস্যা হয়েছে কারও? ইনজামাম- আফ্রিদির ব্যাটিং উপভোগ করে না, বাংলাদেশে এমন ক্রিকেটপ্রেমী খুঁজে পাওয়াটাও দুষ্কর। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হিসাবে সাকিবের বদলে আরেকজনকে (ল্যান্ডল সিমন্স) মঞ্চে আহ্বান করা, এসব যে রমিজের ইচ্ছাকৃতভাবে চুলকিয়ে ঘা করা তা বলাটাই নিষ্প্রয়োজন।  আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাম প্রতিনিয়ত  ভুলভাবে উচ্চারণ করেন রমিজ। যেমন সাকিব আল হাসানকে ‘সাকিবুল’ বলা। বিশ্বকাপে সৌম্য সরকারকে একাধিকবার ‘সুমাইয়া সরকার’ বলেছেন এই পাকিস্তানি বিতর্কিত ধারাভাষ্যকার।স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ আর বাঙালিদের নিয়ে এত আক্রোশ কেন রমিজের? তবে কি স্বাধীন বাংলাদেশ- এই ঐতিহাসিক সত্যকে মানতে না পারার কষ্ট থেকেই এমনটা করে আসছেন রমিজরা? এইচআর/এসএম

Advertisement