অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাজেট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব আহরণ হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এক-পঞ্চমাংশের চেয়েও কম। তবে চলতি অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আমদানি ব্যয় কমেছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাথমিক পণ্যের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় আমদানি ব্যয় কমেছে।রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের জাতীয় বাজেটের বাস্তবায়নের এ চিত্র তুলে ধরেন তিনি। অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয় ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব আহরণ হওয়ার প্রেক্ষিতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বৈদেশিক সহায়তা পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট অর্থায়ন ও ঋণ সহায়তা কমেছে।সংসদে উপস্থাপিত অর্থমন্ত্রীর বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ হাজার ৩৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দিয়ে ৮ দশমিক ৪ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। এছাড়া ব্যাংকঋণে সুদের হার (ভারিত হারে) সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরের শেষে তা ১১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। তফসিলি ব্যাংকে আমানতের সুদের হার গত সেপ্টেম্বর শেষে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে, যা আগের বছরের একই সময়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। এছাড়া গত বছরের জানুয়ারিতে কলমানি রেট ৮ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হলেও সেপ্টেম্বরের শেষে তা ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে এসময়ে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম হয়েছে। মূল্য স্ফিতির হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে এবং ১২ মাসের গড় হারে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা বিগত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অপরপক্ষে বিগত অর্থ বছরে ১২ মাসে মূল্যস্ফিতির গড় ছিল ৭ দশমিক ২২ শতাংশ।অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, প্রথম প্রান্তিকে মোট ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা যা বাজেটের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় মোট ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যয় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান করে আটটি বৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণের জন্য একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নেও আমাদের প্রচেষ্ট অব্যাহত রয়েছে।’অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র হতে জিডিপি’র ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র হতে জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। ’চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে সরকারি ঋণের স্থিতি ৩৫ শতাংশ যা অত্যন্ত সহনীয়। সার্বিকভাবে সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমাদের অবস্থান বেশ ভালো। এইচএস/একে/এবিএস
Advertisement