ঢাকায় গণপরিবহনে ভাড়ার নৈরাজ্য থামছেই না। জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাসভাড়া কমলেও তা মানতে বাসের কন্ডাক্টররা অনেকটাই নারাজ। কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানোয় ভাড়ার হিসাব কষতেও বেড়েছে জটিলতা। ফলে ভাড়া নিয়ে রোজ যাত্রীদের সঙ্গে বচসায় জড়াচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা।
Advertisement
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে চড়েন মকবুল হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি যাবেন পল্টন মোড়ে। কন্ডাক্টরকে ৫০ টাকার নোট দেন তিনি। ৩০ টাকা রেখে ফেরত যাত্রীকে ২০ টাকা ফেরত দেন কন্ডাক্টর। এনিয়ে দুজনের মধ্যে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। শেষ পর্যন্ত পাঁচ টাকা ফেরত দিয়ে ২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পল্টনে যেতে হয়েছে ওই যাত্রীকে।
তবে মকবুলের হিসাবে উত্তর বাড্ডা থেকে পল্টন মোড়ের ভাড়া ২০ টাকা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘উত্তর বাড্ডা থেকে পল্টনের ভাড়া রাখলো ৩০ টাকা। ঝগড়ার পর পাঁচ টাকা ফেরত দিলো। তবুও পাঁচ টাকা বেশি নিলো। মাথা খারাপ হবে না কেন বলেন তো?’
ওই বাসের কন্ডাক্টরের দাবি, আগেই ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া এখণ ৩০ টাকা হয়েছে।
Advertisement
কিলোমিটার হিসাব করলে ভাড়া কত আসে ২০ নাকি ৩০ টাকা- এমন প্রশ্নে কন্ডাক্টর বলেন, ‘ওমনে হিসাব করলে তো চলবো না।’
জানা গেছে, তেলের দাম বাড়ায় গত আগস্টের শুরুতে মহানগরীতে ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে প্রতি কিলোমিটারে আড়াই টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। পরে আগস্টের শেষের দিকে তেলের দাম কমে। ফলে ভাড়াও সমন্বয় করে বিআরটিএ। এতে কিলোমিটারপ্রতি পাঁচ পয়সা কমিয়ে ২ টাকা ৪৫ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া করা হয় আট টাকা।
আরও পড়ুন: কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমলো বাসভাড়া
গুগল ম্যাপ ঘেঁটে দেখা যায়, উত্তর বাড্ডা থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তার দূরত্ব সাড়ে সাত কিলোমিটার। সেই হিসাবে ভাড়া আসে ১৮ টাকা ৩৭ পয়সা। যদি আট কিলোমিটারও ধরা হয়, ভাড়া আসবে ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। যদি পাঁচ পয়সা না কমিয়ে আড়াই টাকা ভাড়া ও আধা কিলোমিটার বাড়িয়ে আট কিলোমিটার রাস্তা ধরা হয়, তবুও ভাড়া হবে সর্বোচ্চ ২০ টাকা। অথচ পরিবহনগুলো ভাড়া নিচ্ছে ২৫-৩০ টাকা।
Advertisement
এদিকে, বাসে ভাড়ার চার্ট দেখাতেও পারেননি ভিক্টর ক্লাসিকের ওই কন্ডাক্টর। তিনি বলেন, ‘আগে ওয়েবিল ছিল। তখন ভাড়া নিতাম পল্টন-উত্তর বাড্ডা ২৫ টাকা। এখন ওয়েবিল নেই। কিন্তু ভাড়াও তো বাড়ছে। ওয়েবিল না থাকলে কী হইবো, মালিক তো ঠিকই সিট হিসাব করে আমাদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেন।’
আরও পড়ুন: বাসভাড়া বাড়লো মহানগরীতে প্রতি কিমি ৩৫, দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা
পল্টন মোড়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রী মোমিনুল। উত্তরা থেকে পল্টনে নিয়মিত যাতায়াত করেন তিনি। ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫৫ টাকা ভাড়া নেয়। আবার কোনো গাড়ি ৬০ টাকাও ভাড়া রাখে।’
গুগল ম্যাপ অনুযায়ী, পল্টন মোড় থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তার দূরত্ব ২০ কিলোমিটারের মতো। দুই টাকা ৪৫ পয়সা হিসাব ধরলে ভাড়া আসে সর্বোচ্চ ৪৯ টাকা। অথচ পল্টন থেকে এয়ারপোর্ট কিংবা জসিম উদ্দিন রোড পর্যন্তই ৫০ টাকা করে ভাড়া নেয় পরিবহনগুলো।
মোমিনুল বলেন, মেরুল বাড্ডা থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিআরটিসি বাসে ১৫ টাকা ভাড়া দাবি করা হয়। মেরুল থেকে ভাড়া বেশি রাখলেও সর্বোচ্চ ১০ টাকা রাখতে পারে। আকাশ কিংবা ভিক্টর পরিবহনেও ১৫ টাকা চাওয়ার সাহস পায় না। কিন্তু বিআরটিসি ঠিকই পাঁচ টাকা বেশি চেয়ে বসলো।
৫ পয়সা ভাড়া কমানোর আদেশ কার্যকরে অনীহাসরকার কিলোমিটারপ্রতি ৫ পয়সা কম ভাড়া কমালেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। পাঁচ পয়সা ভাড়া কমানোর হিসাব আরও জটিলতা বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
মোমিনুল নামের যাত্রী বলেন, ধরেন কিলোমিটার হিসাব করে আমার ভাড়া আসলো ১৪ টাকা ৭০ পয়সা। এখন সুপারভাইজার আমাকে ৩০ পয়সা কোথা থেকে ফেরত দেবেন। এমনিতেই ভাড়া বেশি রাখে। তার ওপর আবার এসব পয়সার গণ্ডগোলে ভাড়া আরও বেশি রাখার সুযোগ পায়।
আরও পড়ুন: বাসভাড়া ৫ পয়সা কমানোর প্রভাব নেই গণপরিবহনে
জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগোনিউজকে বলেন, ‘৫ পয়সা কম ভাড়া কোথাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা বাস্তবায়নের সুযোগও নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাসা সানারপাড়া। সেখান থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া হয় ২১ টাকা। কিন্তু আমার কাছ থেকে ভাড়া রাখে ২৫ টাকা। ২০ কিলোমিটার গেলে এক টাকা ভাড়া কমবে, এটা আসলে বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। সবাই কি ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করেন নাকি? এমনিতেই তো ভাড়া বেশি রাখে।’
এমআইএস/এএএইচ/এএসএম