সুকুমার রায়ের একটি ছোটগল্প। আলি শাকালের মত ওস্তাদ আর ধূর্ত নাপিত সে সময়ে মেলাই ভার ছিল। বাগদাদের যত বড় লোক তাকে দিয়ে খেউড়ী করাতেন, গরিবকে সে গ্রাহ্যই করত না।
Advertisement
একদিন এক গরিব কাঠুরে ঐ নাপিতের কাছে গাধা বোঝাই করে কাঠ বিক্রী করতে এলো। আলি শাকাল কাঠুরেকে বললো, ‘তোমার গাধার পিঠে যত কাঠ আছে সব আমাকে দাও, তোমাকে এক টাকা দেব।’ কাঠুরে তাতেই রাজী হয়ে গাধার পিঠের কাঠ নামিয়ে দিল।
তখন নাপিত বললো, ‘সব কাঠ তো দাও নি; গাধার পিঠের গদিটা কাঠের তৈরি; ওটাও দিতে হবে।’ কাঠুরে তো কিছুতেই রাজী হলো না; কিন্তু নাপিত তার আপত্তি গ্রাহ্য না করে গদিটা জবরদস্তি করে কেড়ে নিয়ে, কাঠুরেকে এক টাকা দিয়ে বিদায় করে দিল।
কাঠুরে বেচারা আর কি করে? সে গিয়ে খালিফের কাছে তার নালিশ জানাল। খালিফ বললেন, ‘তুমি তো গাধার পিঠের সব কাঠ দিতে রাজী ছিলে; তবে আর এখন আপত্তি করছ কেন? কথামতই তো কাজ হয়েছে।’ তারপর কাঠুরের কানে ফিস্ ফিস্ করে কি জানি বললেন; কাঠুরেও মুচ্কি হেসে, ‘যো হুকুম’ বলে সেলাম ঠুকে চলে গেল।
Advertisement
কিছুদিন পর কাঠুরে আবার নাপিতের কাছে এসে বললো, ‘নাপিত সাহেব, আমি আর আমার সঙ্গীকে খেউড়ী করার জন্য তোমাকে ১০ টাকা দেব, তোমার মত ওস্তাদের হাতে অনেক বেশি টাকা দিয়েও খেউড়ী হতে পারলে জন্ম সার্থক হয়। তুমি কি রাজী আছ?’ নাপিত তো খোসামোদে ভুলে, কাঠুরেকে কামিয়ে চট্পট্ দিল; তারপর তাকে বললো, ‘কৈ হে তোমার সঙ্গী?’
কাঠুরে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে তার গাধাটি এনে হাজির করল। নাপিত তো বেজায় চটে গিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, ঘুষি বাগিয়ে বলল, ‘এত বড় বেয়াদবি আমার সঙ্গে! সুলতান, খালিফ, আগা, বেগ যার হাতে খেউড়ী হবার জন্য সর্বদাই খোসামোদ করে, সে কি না গাধাকে কামাবে! বেরোও এখনি এখান থেকে!’
কাঠুরে নাপিতের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সটান গিয়ে খালিফের কাছে হাজির। খালিফ তার নালিশ শুনে আলি শাকালকে ডেকে পাঠালেন। নাপিত এসেই হাত জোড় করে বলল, ‘দোহাই ধর্মাবতার! গাধাকে কি কখনও মানুষের সঙ্গী বলে ধরা যেতে পারে?’ খালিফ বললেন, ‘তা না হতেও পারে, কিন্তু গাধার পিঠের গদিও কি কখনও কাঠের বোঝার মধ্যে ধরা যেতে পারে? তুমিই একথার জবাব দাও।’ নাপিত তো একেবারে চুপ!
কিছুক্ষণ পর খালিফ বললেন, ‘আর দেরি কেন? গাধাকে কামিয়ে ফেল; কথা-মতো কাজ না করতে পারলে তার উচিত সাজার ব্যবস্থা হবে জানই তো।’ নাপিত বেচারা আর করে কি? গাধাকে বেশ করে খুর বুলিয়ে কামাতে লাগল। সে তামাসা দেখার জন্য চারিদিকে ভিড় জমে গেল। কামান শেষ হতেই নাপিত অপমানে মাথা হেঁট করে বাড়ি পালাল। কাঠুরেও নেড়া গাধায় চড়ে নাচতে নাচতে বাড়ি পালাল।
Advertisement
লেখা: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত
প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।
কেএসকে/জিকেএস