সপ্তাহে গড়ে এক ঘণ্টারও কম সময় ওজন তুললে আপনার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০-৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে, এমনটিই জানাচ্ছে এক গবেষণা।
Advertisement
আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণাটি ২০১৮ সালে মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণা কি বলছে?
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে অনেক গবেষণায়। সেগুলোর মধ্যে এই গবেষণাও অন্যতম।
Advertisement
এই গবেষণার জন্য গবেষকরা অ্যারোবিক্স সেন্টার লংগিচুডিনাল স্টাডিতে ১৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্কদের ডেটা বিশ্লেষণ করেন।
সাপ্তাহে এক ঘণ্টারও কম ভারোত্তোলন বা শক্তি প্রশিক্ষণ (স্ট্রেংথ ট্রেনিং) মেটাবলিক সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি ২৯ শতাংশ কমায়। এই সিনড্রোম হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়ার ঝুঁকিও ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমায় ভারোত্তোলন।
অন্যান্য গবেষণা গবেষণা এই বিষয়ে কি বলে?
বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে হাড়ের স্বাস্থ্য, শারীরিক এমনকি মোনসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যায়াম কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে বেশ কিছু গবেষণা আছে।
Advertisement
তবে যখন কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার কথা আসে, তখন বেশিরভাগ মানুষেরাই মনে করেন এক্ষেত্রে হাঁটার মতো কম সাধারণ ব্যায়াম করা উচিত। তবে গবেষকদের দাবি, ওজন উত্তোলন হৃদপিণ্ডের জন্য ততটাই উপকারী যতটা পুরো স্বাস্থ্যের জন্য।
কোপেনহেগেনের গবেষকদের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারোত্তোলন কার্ডিও ব্যায়ামের চেয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। গবেষকরা দেখেছেন, যদিও উভয় ধরনের ব্যায়াম হার্টের জন্য ভালো, তবে ভারোত্তোলনের একটি অতিরিক্ত সুবিধা আছে।
এটি পেরিকার্ডিয়াল অ্যাডিপোজ টিস্যুর পরিমাণ কমায়, যা আসলে এক ধরনের বিপজ্জনক হার্টের চর্বি। আবার উভয় ব্যায়ামই এপিকার্ডিয়াল অ্যাডিপোজ টিস্যুর মাত্রা কমিয়ে দেয়, এটি আরেকটি চর্বি যা হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। গবেষণাটি ৩২ জনের উপর করা হয়েছিল। তাদেরকে ১২ সপ্তাহের ওজন প্রশিক্ষণে রাখা হয়েছিল।
আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন বলেছে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন পরপর শক্তি প্রশিক্ষণের অভ্যাস শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে।
হার্টের জন্য ভারোত্তোলন কেন উপকারী?
প্রতিবেদন অনুসারে, ওজন উত্তোলন চর্বিহীন ভর বাড়ায় যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে আরও রক্ত পাম্প করতে সহায়তা করে। পরবর্তীকালে এটি ধমনীর উপর চাপ কমায়। ফলে মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি কমে।
জন হপকিন্সের গবেষকরা বলছেন, যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন বা পেট বড় হয়ে গেলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। সেক্ষেত্রে নিয়মিত ভারোত্তোলন তাদের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে ও চর্বিযুক্ত পেশি ভর তৈরি করতে পারে।
গবেষণা দেখা গেছে, শক্তি প্রশিক্ষণের মতো ব্যায়ামগুলো শরীরে এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল বাড়াতে ও এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকেন ও নিয়মিত শারীরচর্চা করেন না কিংবা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
তাই শরীরচর্চার বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে দৈনন্দিন রুটিনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সবারই।
এই গবেষণা অনুসারে, প্রতি সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যায়াম গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জিকেএস