ধর্ম

অমুসলিমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা যাবে কি?

মানুষ মারা গেলে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনায় দোয়া করা হয়। কিন্তু অমুসলিম কেউ মারা গেলে কি তাদের জন্য শোক প্রকাশ করা যাবে? তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা রহমত কামনায় দোয়া করা যাবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

Advertisement

দুঃখ প্রকাশ করা যাবে

অমুসলিমের মৃত্যুতে প্রয়োজনে তার নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে শোক প্রকাশ করা যাবে। তাদের দুঃখের এ সময়ে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া যাবে। কেউ কেউ বলেন, তাদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলাতেও বাধা নেই। কেননা এগুলো স্বাভাবিক মানবীয় সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। এ কথার সমর্থনে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

لَا یَنۡهٰىکُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ لَمۡ یُخۡرِجُوۡکُمۡ مِّنۡ دِیَارِکُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡهُمۡ وَ تُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ

Advertisement

‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদের তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: আয়াত ৮)

ক্ষমার দোয়া করা যাবে না

যারা মুসলিম নয়; কখনো ইসলামে বিশ্বাস করেনি; তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য দোয়া করা যাবে না। দোয়া করার অনুরোধও করা যাবে না। তা মুমিন মুসলমানের জন্য সুস্পষ্ট হারাম। কেননা ঈমানহীন ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর পর দোয়া করা-না করা সমান কথা। কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট।

তবে অমুসলিমদের জন্য কোনো প্রকার ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। তাদের জন্য রহমতের দোয়া করাও বৈধ নয়। এ কথা সমর্থনে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-

Advertisement

وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِهٖ ؕ اِنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ مَا تُوۡا وَ هُمۡ فٰسِقُوۡنَ

‘তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কখনো তাদের জন্য (জানাজার) নামাজ পড়বে না, আর তাদের কবরের পাশে দণ্ডায়মান হবে না। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে কুফরি করেছে আর বিদ্রোহী পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।’ (সুরা তওবা: আয়াত ৮৪)

কেননা যে ব্যক্তি ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করেননি, তিনি নিশ্চিতভাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ وَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ فِیۡ نَارِ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ اُولٰٓئِکَ هُمۡ شَرُّ الۡبَرِیَّۃِ ؕ

‘নিশ্চয়ই আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে, তারা দোজখের আগুনের মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ: আয়াত ৬)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

مَا کَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ لَوۡ کَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ

‘নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয়ই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনের অধিবাসী।’ (সুরা তওবা: আয়াত ১১৩)

এ জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর মৃত মায়ের জন্য ইসতেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আমার প্রভুর কাছে আমার মায়ের জন্য ইসতেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার অনুমতি চাইলে আমার প্রভু আমাকে অনুমতি দান করেননি। আর তার কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।’ (মুসলিম)

অমুসলিম বা ঈমানহীন ব্যক্তির জন্য দোয়া প্রসঙ্গে হজরত নুহ আলাইহিস সালামের ঘটনাটি উল্লেখ করা যেতে পারে। যখন তাঁর ছেলে পানিতে ডুবে মরতে ছিল। সে বিষয়টিও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আর তা হলো-

আর নুহ তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন, হে পরওয়ারদেগার! আমার ছেলে তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী।’ (সুরা হুদ: আয়াত ৪৫)

‘আল্লাহ বলেন, হে নুহ! নিশ্চয়ই সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চয়ই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৪৬)

তখন হজরত নুহ আলাইহিস সালাম ঈমানহীন সন্তানের জন্য দোয়া করার আবেদন থেকে ফিরে আল্লাহর কাছে এ মর্মে প্রার্থনা করেন-

رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ

উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি আউজুবিকা আন আসআলুকা মা লাইসা লি বিহি ইলমুন ওয়া ইল্লা তাগফিরলি ওয়া তারহামনি আকুমমিনাল খাসিরিন।’

অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার যা জানা নেই এমন কোনো দরখাস্ত করা থেকে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৪৭)

সুতরাং কোনো অমুসলিম মারা গেলে তার নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে শোক প্রকাশ করা যাবে কিন্তু তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা রহমত কামনা করা যাবে না। তাদের জন্য এ কথাও বলা যাবে না যে, ওপারে ভালো থাকবেন কিংবা শান্তিতে বিশ্রাম নিন’।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এসইউ/জিকেএস