বিলের নাম ‘কাশোরার চর’। বিশাল আয়তনের এ বিলের বদ্ধ পানিতে বাঁশের তৈরি মাচায় ঝুলে আছে লাউ, কুমড়া, শসা। জলের ওপর কচুরিপানার বেডে বাতাসে দোল খাচ্ছে লালশাক, কলমি শাক, ডাটা, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি।
Advertisement
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাশোরারচর বিলে পাঁচ বছর ধরে ভাসমান পানিতে কচুরিপানার বেডে সবজি আবাদ করছেন এলাকার কৃষক আমির উদ্দিন ও মো. নুরুল। বদ্ধ জলাশয়ে সবজি চাষ করে দিন ফিরেছে এই দুই কৃষকের মতো হাজারও কৃষকের।
ভাসমান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। বদ্ধ জলাশয়ে কোনো প্রকার রাসয়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া কম খরচে উৎপাদন করা বিষমুক্ত এসব সবজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। কম খরচে বেশি লাভ মেলায় এ পদ্ধতিতে সবজি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে দিন দিন বাড়ছে ভাসমান বেডে সবজির আবাদ।
থই থই জলের ওপরে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়াসহ নানা জাতের শীতের আগাম সবজি। এমন দৃশ্য দেখা যাবে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায়।
Advertisement
গত কয়েক বছর ধরে জেলার কয়েকটি উপজেলায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে বদ্ধ জলাশয়ে ভাসমান পানিতে বিশেষ পদ্ধতিতে নানা জাতের সবজির আবাদ। এতে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা।
পানির ওপর ভাসমান কচুরিপানার বেড়ে চাষ হচ্ছে, লাউ, কুমড়া, ঢ্যাঁড়শ, বরবটি, লালশাক, শসা, ঝিঙে, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি। বর্ষা মৌসুমে বছরের প্রায় ছয় মাস এ পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। আর পানি শুকিয়ে গেলে কচুরিপানার বেড ব্যবহার করা যায় জৈবসার হিসেবে। বিষমুক্ত এসব সবজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
মহিনন্দ ইউনিয়নের ভাস্করখিলা বিলে ভাসমান পদ্ধতিতে মাচার ওপর সবজি আবাদ করেছেন কৃষক আব্দুল গণি। ২০১৩ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে কচুরিপানার মাচায় সবজি চাষ করছেন তিনি।
আব্দুল গণি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে কম খরচে সহজেই সবজি চাষ করা যায়। সার ও কীটনাশক লাগে না। বাজারে এ সবজির চাহিদাও বেশি। এজন্য লাভও পাওয়া যায় বেশি। তাই আমাকে দেখে অন্যরাও এ পদ্ধতিতে সবজি আবাদ শুরু করেছেন।’
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ভর্তুকির টাকায় বাড়ির পাশের নদী, খাল-বিল ও অনাবাদি বদ্ধ জলাশয়ে কচুরিপানা দিয়ে কৃষকদের বেড তৈরিসহ বিনামূল্যে সবজির বীজ ও নগদ টাকা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ২০১৭ সাল থেকে কিশোরগঞ্জসহ দেশের ৪৬টি জেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও সারাদেশে এটি সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
কৃষি বিভাগের ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ, গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস। তিনি বলেন, শুধু বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনই নয়; সবজি চাষ শেষ হলে কচুরিপানার বেড অন্য ফসলি জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. জাহিদুল আমিন বলেন, ‘লাভজনক এ প্রকল্প সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। তাই ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার চাষিদের প্রকল্প পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিশোরগঞ্জে পাঠানো হচ্ছে।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুস সাত্তার জানান, বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সদর, নিকলী ও কটিয়াদী উপজেলায় সীমিত পরিসরে ভাসমান বেডে সবজি আবাদ করা হচ্ছে। জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও এটি সম্প্রসারণ করা হবে।
এসআর/এএসএম