বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পাননি মোবারক আলী শেখ নামের অবসর প্রাপ্ত এক শিক্ষক। তাই হাতে লেখা একটি পত্রে টিকিট না পাওয়ার দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। সেই চিঠি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোবারক আলী নওগাঁ সদর উপজেলার দোগাছী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ১১ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম কাটতে যান। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে ফিরে আসেন।
হাতে লেখা পত্রে ওই শিক্ষক লিখেছেন, ‘সান্তাহার রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়েছি রোববার সকাল ৬ট ২২ মিনিটে। ১ নম্বর কাউন্টারে আমি প্রথম ব্যক্তি। আশা ছিল দুটি টিকিট পাবো এসি স্নিগ্ধা, ১৫ তারিখ ট্রেন কুড়িগ্রাম। সকাল ৮ টায় কাউন্টার খোলা হলো। টিকিট যিনি দিচ্ছেন উনি একজন নারী। বললাম ‘মা’ আমাকে এসির দুটি টিকিট দেন। উনার ওপরের বস টিকিট কাউন্টারের হেড। তার নির্দেশ মোতাবেক আমাকে না দিয়ে এসি স্নিগ্ধার সব টিকিট তার বসকে দিয়ে দিলেন।’
তিনি আরও লিখেন, ‘আমি কয়েক বার তাদের কাছে অনুরোধ করেও ব্যর্থ হয়েছি। আমার বয়স ৬৫ বছর পেরিয়েছে। আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বসের কথা রানীনগরের এসিল্যান্ডের সব টিকেট লাগবে। তাই তিনি আমাকে দুটি টিকিট দিতে পারবেন না। আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। বুঝাতে পারছি না নিজের মনকে। কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এলাম।’
Advertisement
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোবারক আলী শেখ বলেন, ‘পত্রে যা লিখা আছে সবই সঠিক। আমার চাওয়া ছিল শুধু দুটি টিকিট। বার্ধক্য জনিত বা বয়স্ক যারা টিকিট কিনতে লাইনে দাঁড়ায় সবাইকে সম্মান করা উচিত বলে মনে করি। তিনি শিক্ষক বা যে শ্রেণির মানুষই হোক না কেন। পরে কয়েকটি জায়গা থেকে ট্রেনের টিকিট দেওয়ার জন্য আমাকে ফোন করা হয়েছিল যা প্রত্যাখ্যান করেছি।’
এ বিষয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী নাসরিন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্টেশনের দুই কাউন্টার থেকে নিয়মিত এবং অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। তার (শিক্ষক) চাহিদা ছিল এসি চেয়ারের দুটি টিকিট। কম্পিউটারে যখন সার্চ করা হলো তখন একটি টিকিট দেখা যায়। যেহেতু সিট নাই এজন্য তাকে এসি কেবিনের কথাও বলেছিলাম কিন্তু তিনি নিতে চাননি। তিনি অন্য কোনো ট্রেনের টিকিটও নিতে চান না। পরে তিনি ফেসবুকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। আমি নাকি এসি টিকিট প্রিন্ট করে বসের হাতে দিয়েছি। যা আমার কাছেও দুঃখজনক মনে হচ্ছে। সে সময় আমার পাশের কাউন্টার থেকে কয়েকটি এসি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তিনি কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন বুঝতে পারছি না।’
সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং মনিরুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই কাউন্টার থেকেও টিকিট বিক্রি হয়। ওই শিক্ষককে টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা যায় তার চাহিদা মতো টিকিট নাই।’
এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, ওইদিন টিকিট বিক্রির সময় কী হয়েছিল জানা নেই। তবে ফেসবুকে একটি চিঠি দেখে বিষয়টি জেনেছি। এটি ছোটখাটো বিষয় বলে মনে হয়েছে।
Advertisement
আব্বাস আলী/এসজে/জিকেএস