এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য মমির খোঁজ পাওয়া গেছে। মমির জন্য শুধু মিশরই বিখ্যাত ছিল না। হাজার হাজার বছর আগে এই সংস্কৃতি লালন করেছেন অনেক জাতি। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি মমি গবেষণা করেছেন একদল গবেষক। যার মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। গবেষকরা ধারণা করছেন তারা ছিলেন প্রাক-কলম্বিয়ান। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় তাদের মৃত্যুর কারণ।
Advertisement
গবেষণার পর জানা যায়, পুরুষ দুজন নির্মমভাবে হত্যার স্বীকার হয়েছিলেন। একজনকে হত্যা করা হয়েছিল ছুরিকাঘাত করে। অন্যজনকে মেরুদণ্ডে আঘাত করে। থ্রিডি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি ব্যবহার করে তিনটি মমিকৃত দেহ বিশ্লেষণ করেছেন মিউনিখ ক্লিনিক বোগেনহাউসেনের গবেষকরা।
এই মমিগুলো এতদিন ছিল ভিন্ন জাদুঘরে। জার্মানির মারবার্গের অ্যানাটোমিকাম জাদুঘরে ছিল একটি পুরুষ মমি এবং সুইজারল্যান্ডের ডেলিমন্টের আর্ট অ্যান্ড হিস্ট্রি জাদুঘরে ছিল বাকি দুজন। ধারণা করা হয়, জার্মানির মারবার্গের অ্যানাটোমিকাম জাদুঘরে থাকা পুরুষ মমিটি জীবদ্দশায় ছিলেন উত্তর চিলির আরিকা অঞ্চলের বাসিন্দা।
৯৯৬-১১৪৭ সালের মধ্যে কোনো এক সময় তিনি মারা গেছেন। তার সমাধি ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র। যা দেখে বোঝা যায় তিনি হয়তো ছিলেন কোনো মৎস্যজীবী। কারণ তার সঙ্গে মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছিল।
Advertisement
হাড়ের বৈশিষ্ট্য থেকে গবেষকরা অনুমান করেন, তার বয়স ছিল ২০-২৫ বছরের মধ্যেই। অর্থাৎ একজন যুবক ছিলেন মৃত্যুর সময়। প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন তিনি। গবেষকদের ধারণা, মাছ ধরতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের হাতে মারা পড়েছিলেন তিনি। প্রথমে তাকে মাথায় আঘাত করা হতেছিল। এরপর ধারালো ছুরির আঘাতে মারা যান তিনি। দাঁত পরীক্ষায় জানা যায়, তার প্রধান খাদ্য ছিল ভুট্টা। এছাড়াও ফুসফুসে গুরুতর যক্ষ্মা রোগের লক্ষণও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
বাকি দুজন ছিলেন পেরুর আরেকুইপা অঞ্চলের। তাদের মধ্যে নারী যিনি, তিনি প্রাকৃতিক কারণে মারা গিয়েছিলেন। গবেষকদের ধারণা তিনি ১২২৪ থেকে ১২৮২ সালের মধ্যে মারা গিয়েছেন। কার্বন ডেটিং থেকে জানা যায় বাকি যে পুরুষ মমিটি তিনি মারা গিয়েছিলেন ৯০২ থেকে ৯৯৪ সালের মধ্যে।
নারী মমির মৃত্যুর কারণ ছিল স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি বয়স্ক অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই মারা যান। তবে অন্য যে পুরুষ মমিটি রয়েছে তার মেরুদণ্ডের হাড়ের বেশ কিছু সমস্যা পেয়েছেন গবেষকরা। জীবদ্দশায় তিনি মেরুদণ্ডের হাড়ের সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে তার মেরুদণ্ডে বড় আঘাতের চিহ্নও পেয়েছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে ঘাড়ের নিচে খুব বড় কিছুর আঘাতেই তিনি মারা যায়।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পেরুতে পাওয়া দুটি মমি পাওয়া গিয়েছিল শুয়ে থাকা অবস্থায়। কিন্তু তারা যে সময় মারা যান সেসময় পেরুতে সমতল ভূমির অভাবে মৃতদেহ শুইয়ে কবর দেওয়া হত না। তাই কেন তাদের এভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল তা নিয়েও গবেষণা করছেন গবেষকরা। তাদের ধারণা কবর দেওয়ার বিষয়টা একেক সংস্কৃতিতে একেক রকম। তাই হতে পারে তারা অন্য কোনো সংস্কৃতির ছিলেন।
Advertisement
সূত্র: ডেইলি মেইল, অ্যানসাইন্ট অরিজিন
কেএসকে/এএসএম