রাজনীতি

শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত নারী এমপি সাজেদা চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে বেশিবার নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন ৬ বার। সেই ১৯৬৫ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্বও পালন করছেন। ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।

Advertisement

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। এছাড়াও ২০১০ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।

সংসদের লাইব্রেরিতে রাখা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা গেছে, তার জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মাতুলালয়ে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার পিতা সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ভাষা সৈনিক, মুজিবনগর সরকারের প্লানিং সেলের সদস্য, লেখক এবং দেশের বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

শিক্ষাজীবনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৯-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা, মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৫ সময়ে নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়ে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার, ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে দলকে সুসংগঠিত করতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

Advertisement

তিনি ১৯৮৩-১৯৮৬ সময়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৬-১৯৯২ সময়ে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২ সাল থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তিনি অবদান রেখেছেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপ পান। একই সালে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ ‘সিলভার এলিফ্যান্ট পদক’ লাভ করেন।

বিশিষ্ট এ রাজনীতিবিদ ১৯৭০-১৯৭৩ সময়ে জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৩-৭৫ সময়ে ১ম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ১৯৯১-৯৫ সময়ে ৫ম জাতীয় সংসদ এবং ১৯৯৬-২০০১ সময়ে ৭ম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ম জাতীয় সংসদে তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং ৭ম জাতীয় সংসদে সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এ দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে জাতীয় সংসদে উপ-নেতার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও নবম জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

Advertisement

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদে উপ-নেতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দশম জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চলমান একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ১৯৭১ সালে ভারত যান। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সম্মেলন, সরকারি কাজ ও শুভেচ্ছা সফরে রাশিয়া, সাইপ্রাস, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কেনিয়া, মিশর, জার্মানি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসহ বহু দেশ সফর করেন।

এইচএস/কেএসআর