দেশজুড়ে

মাছ কেটে ৩২ বছর সংসার চালান তুজিন

‘মাছ কাটছি প্রায় ৩২ বছর। ছোট থেকে এই পেশায় থাকায় এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এটাই আমার রুটি-রুজি। দিনে যে দু-তিনশ টাকা দেয় মহাজন, সেটা দিয়েই সংসার চালাই।’

Advertisement

কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর সাহেব বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. তুজিন (৫৫)। নব্বইয়ের দশক থেকে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। এই পেশায় তিন দশক পেরিয়ে তিনি এখন বেশ অভিজ্ঞ।

পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও পরিচিত মাছের বাজার রাজশাহীর সাহেব বাজার। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ বেচাকেনা করা ব্যক্তিদের যাতায়াতে ব্যস্ত থাকে বাজারটি। জীবিকার তাগিদে তুজিনের মতো অনেকেরই ভরসা মাছ কাটা। তুজিন ছাড়াও অনেকেই দৈনিক মাছ কাটার কাজ করেন। এটিই তাদের পেশা। মাছ কাটার আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার।

সাহেব বাজারের মাস্টারপাড়া মাছের বাজারে গেলে দেখা মিলবে এরকম ৫০-৬০ জন দিনমজুরের। প্রতিটি মাছের দোকানে যেসব মাছ বিক্রি হয় সবগুলো কেটে পিস করে দেন তারা। বিনিময়ে মজুরি হিসেবে মহাজন টাকা দেন। করোনা মহামারির আগে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা পেলেও এখন পাচ্ছেন ৪০০-৫০০ টাকা।

Advertisement

কথা বলে জানা যায়, দুই ছেলে, স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ তুজিনের পরিবারের মোট ছয়জন সদস্য। বাবার সংসারে অভাব-অনটন দূর করতেই শৈশবে এসেছিলেন এই পেশায়। এখন নিজের সংসার চলে। বড় ছেলেকে অভাবে পড়াশোনা না করাতে পারলেও ছোট ছেলেকে পড়াশোনা করান।

রাজশাহী সৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সাহেব বাজারে তুজিনের মতো দিনমজুর ছিলেন প্রায় দেড়শ জন। এখন সে সংখ্যা কমে পঞ্চাশের কোটায় ঠেকেছে।

মো. তুজিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছ বিক্রি একটু কম হচ্ছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় মহাজন আগের মতো টাকা দিতে পারে না। আগে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা দিলেও এখন ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দেয়। এতে সংসার কোনোমতে চলছে।’

৩২ বছর ধরে মাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে হাতেগোনা দু-একজন মাছ কিনে কেটে নিতো। এখন ছোট হোক বড় হোক সব মাছ কেটে দিতে হয়। মাছ কাটা এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মাছ কাটতে আমার অনেক ভালো লাগে। দিনে ৫০-৬০ মণ মাছ কাটলে আমার কোনো সমস্যা হবে না বরং ভালোই লাগবে।’

Advertisement

তুজিনের কাছ থেকে মাছ কেটে নিচ্ছিলেন ক্রেতা আকতারী আলম। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা শুধু মাছ কিনে নিয়ে যেতাম। বাসায় গিয়ে কাটা-ছেঁড়া করতাম। এখন তারা কেটে দেওয়াতে আমাদের সুবিধা হয়। বাসায় গিয়ে আর কাটতে হয় না।’

নগরীর সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুস সবুর বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী। প্রতিদিন সময়মতো অফিসে যেতে হয়। বাজার থেকে মাছ কিনে নিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো কেটেকুটে প্রস্তুত করতে সময় লাগে। তাই বাজার থেকেই কাটিয়ে নিয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, এসব কাজ অনেকে ছোট করে দেখেন। কিন্তু তারা না থাকলে আমাদের আরও ভোগান্তিতে পড়তে হতো।

মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, আমার সমিতির ৩০০ জন ব্যবসায়ী আছেন। তাদের কাছে এরকম মাছ কাটার জন্য দিনমজুর থাকে। দিনে তাদের ৩০০-৫০০ টাকা দিতে হয়। আগে আরও একটু বেশি মজুরি পেতো। কিন্তু বাজার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসায় ব্যবসা কমে যাচ্ছে।

এসআর/জিকেএস