সম্প্রতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সূচকের টানা উত্থানের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। এ পরিস্থিতিতেও তলানিতেই পড়ে রয়েছে ব্যাংকখাত। অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম।
Advertisement
অন্যদিকে আয়হীন লোকসানে জর্জরিত অনেক কোম্পানির শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জীবন বিমা ও চামড়া খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই দুই খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেশ বেশি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এতে বাড়ে সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত ২০ পয়েন্টে স্পর্শ করে।
তবে চলতি বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধলে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। টানা দরপতনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে কমে মূল্য আয় অনুপাত। চলতি বছরের জুলাই মাসে ডিএসইর মূল্য আয় অনুপাত সাড়ে ১৩ পয়েন্টের নিচে নেমে আসে।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে নানামুখী পদক্ষেপে সম্প্রতি শেয়ারবাজার আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। এরপরও সার্বিক বাজারের মূল্য আয় অনুপাত এখনো ১৫ পয়েন্টের নিচে রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পিই ১৪ দশমিক ২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
সম্প্রতি শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও ব্যাংক কোম্পানিগুলো বেশি অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। অথচ এক সময় ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ব্যাংকখাতের ওপরই নির্ভর করতো শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন।
কিন্তু খেলাপি ঋণ, পরিচালকদের অনৈতিক কার্যক্রমসহ ব্যাংকখাত সম্পর্কে একের পর এক নেতিবাচক তথ্য বেরিয়ে আসায় ব্যাংকের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভাটা পড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দামে।
যে কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত ১৪ দশমিক ২৬ হলেও ব্যাংকখাতের পিই রয়েছে ৭ দশমিক ৯০ পয়েন্টে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তার প্রভাব ব্যাংকখাতের ওপর খুব একটা পড়েনি।
Advertisement
এদিকে ব্যাংকের তলানিতে পড়ে থাকার মধ্যে জীবন বিমা খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়েছে। ফলে জীবন বিমা খাতের পিই রেশিও বেড়েছে। এ খাতের পিই এখন ৭০ দশমিক ৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। জীবন বিমা খাতের মতো চামড়া খাতের পিইও বেশ বেশি। বর্তমানে এ খাতের পিই দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়নের অন্যতম হাতিয়ার মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। যে প্রতিষ্ঠানের পিই যত কম, ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকি ততো কম। একইভাবে যে প্রতিষ্ঠানের পিই যত বেশি, ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ততো ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠানের পিই ১০-১৫ এর মধ্যে থাকে সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ অনেকটাই ঝুঁকি মুক্ত।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পিই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নির্ণয়ের অন্যতম হাতিয়ার। যে প্রতিষ্ঠানের পিই ১০-এর নিচে ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা নিরাপদ। আর পিই ২০-এর ওপরে থাকলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। পিই ৪০-এর ওপরে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কীভাবে বিনিয়োগ করা উচিত জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে হবে। যেসব শেয়ারের দাম বেশি উঠা-নামা করে, সেগুলোতে বিনিয়োগ না করা। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো করে বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এখন ১০ পিইর নিচে আছে। ১০ পিইর নিচে থাকা শেয়ারে বিনিয়োগ করে কেউ লোকসান করেছেন এমনটা দেখা যায়নি। তবে কেউ যদি ১০ পিইর নিচে না কিনে ৫০ পিইর ওপরে কেনে এর দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।
অন্যদিকে ব্যাংকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বিবিধ খাতের পিই এখনো সার্বিক বাজার পিইর নিচে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পিই রয়েছে ১১ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। আর বিবিধ খাতের পিই রয়েছে ১২ দশমিক ৪০ পয়েন্ট।
বাকি খাতগুলোর পিই সার্বিক বাজারের পিইর ওপরে। এর মধ্যে ওষুধ খাতের ১৪ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, সিরামিক খাতের ৩২ দশমিক ২০ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতের ১৯ দশমিক ৮০ পয়েন্ট, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, আইটি খাতের ২৫ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, সেবা ও আবাসন খাতের ১৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং খাতের ২১ দশমিক ৫০ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতের ২৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতের ১৪ দশমিক ৭০ পয়েন্ট এবং খাদ্য খাতের পিই ২৩ দশমিক ৮০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এমএএস/আরএডি/জেআইএম