ইসমাঈল হোসেন নয়ন
Advertisement
চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। যা দর্শনার্থীদের কাছে চন্দ্রনাথ ট্রেকিংয়ের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি রুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা আনুমানিক ১ হাজার ২০ ফুট।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্য ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ি পথ, কিছু ভাঙা সিঁড়ি আছে।
বামদিকের পথ দিয়ে ওঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন।
Advertisement
এক বৃষ্টিস্নাত ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে পতেঙ্গা থেকে কায়সার এবং বিজয় নগর থেকে তাহের ভাই ও শুভ মামাকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম এ কে খান মোড়। ততক্ষণে আকাশ পরিষ্কার হয়ে এসেছে। সীতাকুণ্ডগামী বাসে উঠলাম চারজনই। সিটি গেইট পার না হতে পুরো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি।
আজ মেঘেদের সঙ্গে কথা হবে। এসে গেলাম সীতাকুণ্ড বাজারে। সাধারণত সীতাকুণ্ড বাজার থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে আমরা এর আগে হেঁটেই গিয়েছিলাম। যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে, তাই সিএনজি করে গেলাম পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত।
বৃষ্টিতে পাহাড় ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা আমার আর তাহের ভাইয়ের আছে। কিন্তু কায়সার আর শুভ মামার নেই। তবে কায়সারের যে অ্যানার্জি; তার কষ্ট হবে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম।
শুরু হলো ট্রেকিং, একেবারে পর্যটকশূন্য ও তীর্থস্থানেও নেই তেমন মানুষ। এদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবারো মুষলধারে পড়তে লাগলো। আহা কী আনন্দ। ইলেকট্রনিক গেজেটগুলো পলিথিনে মুড়িয়ে নিলাম।
Advertisement
বৃষ্টিতে পাহাড় ট্রেকিং অনবদ্য। যারা বৃষ্টিতে পাহাড় ট্রেকিং করেন, তারাই বুঝবেন এ ট্রেকিং কত মধুর! তবে বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কম নয়। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ে ট্রেকিং উপযোগী স্যান্ডেল পরে যাবেন।
প্রথম স্টেপ শেষ হতেই সেখান থেকে মেঘের আনাগোনা শুরু। এদিকে কায়সার আমাদের আগেই চূড়ায় উঠে বসে আছে। গায়ের সাদা গেঞ্জি খুলে আমাদের সিগনাল দিচ্ছে।
আমরাও উঠে গেলাম মেঘেদের শীতল ছোঁয়া নিতে নিতে। খেয়াল করলে বুঝবেন, কী পরিমাণ মেঘ ছিল তখন। কেউ নেই, শুধু আমরা চারজনই সঙ্গে সঙ্গে বসিয়ে দিলাম জীবনজুয়ার আসর।
সুখ-দুঃখের বাক্স খুলে উড়িয়ে দিয়েছি ওই শুভ্র মেঘেদের কাছে। আমি চন্দ্রনাথ পাহাড় বহুবার সামিট করেছি। তবে এতক্ষণ অবধি কখনো চূড়ায় অবস্থান করিনি। এবারই দীর্ঘ সময় ধরে চূড়ায় অবস্থান করেছি।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে এসি, ননএসি বাস ছাড়ে সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে। মোটামুটি সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। চট্টগ্রাম থেকে বাসগুলো মাদারবাড়ি, কদমতলী বাস স্টেশন থেকে ছাড়ে।
তাছাড়া অলংকার থেকে কিছু ছোট গাড়ি ছাড়ে (স্থানীয় ভাবে মেক্সি নামে পরিচিত)। সেগুলো করেও আসা যাবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগামী ট্রেন সীতাকুণ্ডে থামে।
এটি ছাড়ে রাত ১১টায় ও সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল সাড়ে ৬টা-৭টায়। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধু শিবচর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজিতে উঠলে পাহাড়ের প্রবেশ ফটকে নামিয়ে দেবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা। এখান থেকেই ট্রেকিং শুরু। সাধারণত ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছতে।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
সীতাকুণ্ড কাঁচা বাজার এলাকায় ও সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্পকিছু আবাসিক হোটেল আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরে যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতেও থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা আছে।
জেএমএস/এসইউ/এএসএম