দেশজুড়ে

কুমিল্লায় নৌকার মাঝি হতে মরিয়া ১৫ প্রার্থী

তফসিল ঘোষণার পর থেকে কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। দিন যত ঘনিয়ে আসছে মনোনয়ন লড়াই তত জমে উঠছে। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের নেতাদের তৎপরতা দেখা যায়নি।

Advertisement

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভাষ্য, বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। আসন্ন এ নির্বাচনে যেসব জনপ্রতিনিধি ভোটার, তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। যে কারণে দলীয় সমর্থন পেলে এবং বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে বিজয় নিশ্চিত। তবে নির্বাচনের আগে দলীয় টিকিট পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ছিল দলীয় ফরম সংগ্রহের শেষ দিন। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মোট ১৫ নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) আবু তাহের, সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ মো. ওমর ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মফিজুর রহমান বাবলু, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আলী আকবর, ঔষধ প্রশাসনের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আবদুল মান্নান জয়, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাজমুল আহসান পাখি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এবিএম খোরশেদ আলম, আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আবুল বাশার, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন প্রমুখ।

গত ২৩ অগাস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কুমিল্লাজুড়ে আলোচনা শুরু হয় কে পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। তবে এ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের তৎপরতা না থানায় সরকারদলীয় প্রার্থীর সংখ্যা অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বেশি। দলীয় সমর্থন পেতে সম্ভাব্য সব প্রার্থীই এখন কেন্দ্রমুখী।

Advertisement

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ওমর ফারুককে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন স্বপনকে ৪৬ ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) আবু তাহের।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি বিগত সময়ে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো বিতর্কে নিজেকে জড়াইনি। এবারও আওয়ামী লীগ দলীয় টিকিট দিয়ে আমাকেই মূল্যায়ন করবে বলে আশা রাখি।’

জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক বলেন, ‘পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে প্রতি বছরই কাজের জন্য সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছি। গত নির্বাচনে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম, তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আশা করছি এবার আমাকে মূল্যায়ন করা হবে।’

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, ‘আমি কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে সরব ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেত্রীর নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আশা করছি এ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।’

Advertisement

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম জানান, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৪৯ জন এবং নারী ৬২৭ জন। এ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান, ১৭ উপজেলায় সাধারণ ওয়ার্ডে একজন করে ১৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ছয়জন সদস্য নির্বাচিত হবেন।

গত ২৩ অগাস্ট কুমিল্লাসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। আগামী ১৭ অক্টোবর এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে।

তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ১৯-২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২-২৪ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর।

এসআর/এএসএম