ফিচার

বাংলাদেশে এসে রানি এলিজাবেথ যা যা দেখেছিলেন

৯৬ বছর বয়সে নক্ষত্রের পতন। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে মারা গেলেন। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ যুক্তরাজ্যসহ গোটা বিশ্ব। ৭০ বছর রাজ সিংহাসনে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বাকিংহাম প্যালেসের ভেতরে রানির মৃত্যু সংক্রান্ত সাংকেতিক ভাষা ছিল ‘লন্ডন ব্রিজের পতন হয়েছে’ (London Bridge is down)।

Advertisement

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নানান কারণে রানি আলোচনায় থাকেন। ব্রিটেনের রাজা-রানিরা শুধু ইংল্যান্ডের কাছে নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় উপমহাদেশ এক সময় অন্য আরও অনেক দেশের মতোই ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। তখন ব্রিটেনের রানি ছিলেন ভিক্টোরিয়া।

তবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও টান ছিল ভারত উপমহাদেশের প্রতি। বাংলাদেশেও এসেছেন দুইবার। শেষবার আসেন ১৯৮৩ সালের ১৪-১৭ নভেম্বর। স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র একবার সফরে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে সময় তিনি বাংলাদেশের একটি গ্রামের নারীদের দেখতে গিয়েছিলেন।

চার দিনের সরকারি সফরের একদিন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীপুর, সেখান থেকে গাড়িতে করে বৈরাগীরচালায় যান রানি। বৈরাগীরচালা আদর্শ গ্রাম ও প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শন করেন। তিনি গ্রামে গিয়ে গ্রামের সংস্কৃতি দেখতে চেয়েছিলেন। মুড়ি ভাজা হয় কীভাবে সেটি দেখেছিলেন খুব আগ্রহ নিয়ে।

Advertisement

রানির এই সফর এখনো গ্রামটির মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। রানির আগমন উপলক্ষ্যে ওই গ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছিল যা পরবর্তীতে এলাকায় কলকারখানা গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাংলাদেশের কোমলমতি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য তিনি সচেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন।

এর আগে রানি প্রথমবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা সফরে আসেন ১৯৬১ সালে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক রাজকীয় সফরে ঢাকা আসেন। সে সময় স্বামী প্রিন্স ফিলিপও তার সঙ্গে ঢাকায় আসেন। তারা থেকেছিলেন রমনা পার্কের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। এখন সেই ভবনটি ফরেন সার্ভিস একাডেমি হিসেবে পরিচিত।

রানি এলিজাবেথ সে সময় বুড়িগঙ্গা নদীতে স্টিমারে চড়ে নৌ বিহার করেন। তিনি যখন নৌ বিহারে ছিলেন, তখন বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে হাজার হাজার মানুষ হাত নেড়ে রানিকে স্বাগত জানান। রানি বাংলার মানুষের এই অভ্যর্থনায় সিক্ত হয়েছিলেন। তিনি সেবার আদমজী জুট মিলও পরিদর্শন করেন। কীভাবে জুট মিলে চট উৎপাদন হয়, সেটা দেখার আগ্রহ ছিল তার।

এরপর চট্টগ্রামে সার্কিট হাউসে এক নাগরিক সম্বর্ধনায় যোগ দেন রানি। সেসময় তাকে গভর্ণর হাউসে সম্বর্ধনা দেয়া হয় ও আতশবাজি পোড়ানো হয় রাতের ঢাকায়। গভর্ণর লে. জেনারেল আজম খান রানিকে পুরোনো বিমানবন্দর অর্থাৎ তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান।

Advertisement

১৯৮৩ সালে রাজকীয় সফরকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ১৮ মাইল সড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’ লেখা রঙিন ব্যানার এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের পতাকা শোভিত ছিল। এরপর থেকে রানির সৌজন্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে একাধিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সাক্ষাত করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একজন প্রগতিশীল রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। এরই অংশ হিসেবে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে দেখা করেন বঙ্গবন্ধু।

সেবার কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় লন্ডনে রানির সঙ্গে সাক্ষাত হয় বঙ্গবন্ধুর। তবে সেই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কানাডার অটোয়ায়। একটি ছবিতে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে করমর্দন করতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। তবে স্বাধীন বাংলায় যখন রানি এসেছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু বেঁচে ছিলেন না। ঘাতকদের ষড়যন্ত্রে পরিবারসহ নির্মমভাবে প্রাণ দিয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের প্রতি রানির ভালোবাসা ছিল আজীবন। তাই তো পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশ ও দেশের মানুষ রানির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়াও ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কেএসকে/এমএস