অর্থনীতি

১০ বছরেও শেষ হলো না কাজ, মেয়াদ বাড়ছে আরও এক বছর

ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ সহজ করতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। চার বছরে পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছরেও তা হয়নি। দশ বছরে দুর্ঘটনায় এই প্রকল্প কেড়েছে ১১ প্রাণ। আর ২০ কিলোমিটার (নিচ ও উড়ালসহ) রাস্তা তৈরি করতে ধুলাবালি, যানজটে প্রায় দশক ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ তো নিত্যসঙ্গী। এ অবস্থায় নতুন করে আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

Advertisement

এদিকে ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া ট্রাফিক সুরক্ষায় বরাদ্দ রাখা হলেও মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ কারণে ওই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

নতুন করে বিআরটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো নিয়ে বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটায় প্রকল্পটির ট্রাফিক সুরক্ষায় রাখা অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটির জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিস অঙ্গে ‘মেইনটেনেন্স অ্যান্ড প্রটেকশন অব ট্রাফিক’ খাতে ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এরপরও প্রকল্প চলাকালেই প্রকল্প এলাকায় যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার ফলে সাম্প্রতিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনাসহ একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় এই অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়ের যৌক্তিকতা এবং ব্যয় হওয়ার পরও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিআরটির কাজ শুরুর পর ৯ বছরে ঝরেছে ১১ প্রাণ 

নির্মাণকাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত বিআরটির উড়ালপথ তৈরির গার্ডার ধসে চারটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ১৪ আগস্ট উত্তরার জসিমউদ্দীন এলাকায় গার্ডার তোলার সময় তা একটি গাড়ির ওপর পড়ে যায়। এ ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুর শহরে গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।

গত বছরের ১৪ মার্চ বিমানবন্দর এলাকায় এবং আবদুল্লাহপুরে একই দিনে দুবার গার্ডারধসের ঘটনা ঘটে। এতে নির্মাণকাজে যুক্ত ছয়জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজন চীনের নাগরিক ছিলেন।

বিআরটি প্রকল্পে বারবার দুর্ঘটনার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, আমরা তাদের কাজ নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। তাদের বলেছি, যে কাজ আছে সেটা তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করে। এবং কাজ ‘সেফটি-ফার্স্ট’ নীতি অবলম্বন করে মানসম্মত করার জন্য বলেছি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘মানুষের জীবন এমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য হতে পারে না’

সার্বিক বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, এটি একটি দুর্বল প্রকল্প। যে উদ্দেশ্যে বিআরটি চিন্তা করা হয়েছিল তা হয়নি। নির্দষ্ট সময়ে না করতে পারায় জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বাংলাদেশের মতো এত ব্যয় কোথাও নেই। এত ব্যয় হলেও সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। যে কাজ হচ্ছে তারও কোনো জবাবদিহি নেই। কাজের ক্ষেত্রে ‘সেফটি-ফার্স্ট’ নীতি অবলম্বন করার কথা থাকলেও সেটি নেই। এ কারণেই এত দুর্ঘটনা ঘটছে।

এমওএস/এমএইচআর/জিকেএস