পাঁচ বছর আগেও বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে পূর্ব পোলমোগরাসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হতো। কৃষকদের ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পুকুরের মাছও ভেসে যেতো ঢলে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন শত শত কৃষক। বর্ষাকাল এলে তারা দুশ্চিন্তায় থাকতেন। একটি সেচ প্রকল্প তাদের দুশ্চিন্তা থেকে দিয়েছে মুক্তি। বদলে গেছে এখানকার মানুষের ভাগ্য। সেই সোনাইছড়া এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ।
Advertisement
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের সোনাইছড়া পানি প্রকল্পের সেচ সুবিধায় প্রায় ১০০ হেক্টর কৃষিজমিতে রবি শস্য চাষ ও ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। প্রকল্পে ৩০ ফুট গভীরের প্রায় ১০ একরের একটি লেক রয়েছে। যেখানে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখা হয়। পরে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করার জন্য ওই পানি ছাড়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে উপজেলার ১২ নম্বর খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাড়ে ছয়শ কৃষককে নিয়ে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠিত হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করে সমিতি।
শুধু তাই নয়, পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইস গেট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করা হয় সমিতি থেকে। ২০০৬ সালে এলজিইডি ৪২ শতক জমি অধিগ্রহণ করে ও সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি ১০ শতক জমি ক্রয় করে। পরে ৫২ শতক জমিতে প্রায় ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের আওতায় বারোমাসি সোনাইছড়ার মুখে বাঁধ নির্মাণ ও পানি আটকানোর জন্য রেগুলেটর স্থাপন করে এলজিইডি। একই সঙ্গে সাড়ে তিন কিলোমিটার খাল সংস্কার করা হয়।
Advertisement
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, খইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আগে বোরো চাষ হতো না। সোনাইছড়ি পানি প্রকল্পের কারণে বিগত পাঁচ বছর ১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। চলতি বছর ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া লেকের পানি দিয়ে রবি শস্য চিচিঙ্গা, ঝিঙে, লাউ, বরবটি, ধুন্দল, চিনাবাদাম চাষ করা হচ্ছে। প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো চাষ, আউশের বীজতলা প্রস্তুত, রবি শস্যসহ প্রায় ১২৫ হেক্টর কৃষিজমি চাষের আওতায় এসেছে।
পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের কৃষক রফিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে বর্ষাকাল নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকতাম। পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে সবধরনের ফসল নষ্ট হয়ে যেতো। সোনাইছড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে এখন সেই ক্ষতি হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, আগে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারতাম না। এখন লেকে সংরক্ষণ করা পানি দিয়ে সারা বছরই বিভিন্ন রবি শস্য আবাদ করা যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, লেকে সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি থেকে কার্পজাতীয় মাছের চাষ করা হচ্ছে। এখন একেকটি মাছের ওজন প্রায় ৩-৫ কেজি। শুধু তাই নয়, ১০ একরবিশিষ্ট লেকের স্বচ্ছ নীলজলরাশি মুগ্ধ করবে যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে। লেকের পাশবেষ্টিত পাহাড় থেকে বাতাসে ভেসে আসে হরিণের ডাক ও নানা প্রজাতির পাখির সুমধুর কণ্ঠ।
Advertisement
এরই মধ্যে বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্ক সোনাইছড়া ঝরনাকে ইজারা দিয়েছে। সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির উদ্যোগে ইকো রিসোর্ট নির্মাণ ও বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্কের (সিএমসি) অধীনে ইকোশপ নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাইছড়া পানি প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। খৈইয়াছড়া ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এখন বোরো চাষ ও রবি শস্য চাষাবাদ হচ্ছে। সোনাইছড়া ঝরনার রাস্তার উন্নয়ন ও তিনটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বারৈয়ঢালা ন্যাশনাল পার্ক নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরওয়ার উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটন হিসেবেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। সোনাইছড়া ঝরনা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে খৈইয়াছড়া ঝরনা ও নাপিতছড়া ঝরনায় যাওয়া যাবে। তবে পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধার্থে রাস্তা সংস্কার ও ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
এসআর/জেআইএম