এক শতাব্দী আগেও চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ছিল। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, আবারও সেই অবস্থানে ফিরে আসবে দেশটি। তবে এশিয়ান জায়ান্টকে ঘিরে থাকা জটিল পরিস্থিতি, যার মধ্যে কিছু স্বয়ংক্রিয় বটে, আমেরিকাকে পেছনে ফেলে মেরু অবস্থানে ফিরে আসতে সময় লাগবে। এখন অনেক অর্থনীতিবিদই ধারণা করছেন সেই দিন হয়তো নাও ফিরে আসতে পারে।
Advertisement
আমেরিকার চেয়ে চীনের জনসংখ্যা চার গুণ বেশি। ফলে দেশটির অর্থনীতি তাই সমান তালে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা বেশ জটিল। দেশটির মোট জিডিপি বিশ্বের বৃহত্তম হওয়ার জন্য জনপ্রতি জিডিপি আমেরিকার মাত্র এক চতুর্থাংশে পৌঁছাতে হবে। একদিক থেকে চীন এরই মধ্যে সেই পরিমিত কৃতিত্ব অর্জন করেছে। চীনের জিডিপি ২০১৬ সালে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে যখন এটি ডলারে ‘ক্রয়-ক্ষমতার সমতা’ অর্জন করে। এটি একটি পদ্ধতি যা একই আন্তর্জাতিক মূল্য ব্যবহার করে প্রতিটি দেশে পণ্য ও সেবাকে সমন্বিত করার চেষ্টা করে।
কিন্তু মুদ্রা বাজারে প্রচলিত আরও পরিচিত বিনিময় হার ব্যবহার করলেও চীনের জিডিপি এখনো আমেরিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এটি ২০২১ সালে আমেরিকার ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে।
চীনের প্রবৃদ্ধি জিরো-কোভিড নীতির পাশাপাশি, হাউজিং মার্কেটে দর পতন, নির্মাণ খাতে সরকারের উদ্যোগ ও আমেরিকার সঙ্গে প্রযুক্তি যুদ্ধের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রযুক্তি ও শিক্ষার মতো বিকাশমান সেক্টরগুলোতে সরকারের আক্রমণাত্মক নিয়ন্ত্রণও অর্থনীতির চাঙাভাবকে দমন করছে। চীনের অর্থনীতি ২০২১ সালে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে, তবে এ বছর এটি ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেই সৌভাগ্যবান হবে।
Advertisement
দীর্ঘ মেয়াদে, চীনকে বার্ধক্যজনিত প্রতিকূল জনসংখ্যার কারণে একটি জটিল অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে। কিছু জরিপের অনুমান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১৫ বছরে শ্রমশক্তি ১৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হতে পারে দেশটিতে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম মনে করে যে চীনের জিডিপি আমেরিকার কাছাকাছি আসতে পারে অথবা ২০৩০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার পিছিয়েও পড়তে পারে কারণ দেশটি তার প্রতিকূল জনসংখ্যার সমস্যার কথা নিজেই দাবি করছে।
এই বিতর্কের সবচেয়ে কঠিন ও উপেক্ষিত প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি হলো দুই দেশের মধ্যে বিনিময় হার এবং তাদের মধ্যে দামের পার্থক্য কি হবে। আমেরিকার তুলনায় চীনে পণ্য ও সেবা এখনো যথেষ্ট সস্তা।
চীন যদি আমেরিকার সঙ্গে উৎপাদন ব্যবধান কমিয়ে আনতে থাকে, তাহলে এর দামও একই রকম হওয়া উচিত, যেটি সম্ভব শক্তিশালী মুদ্রা বা দ্রুত মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে। এই ফ্যক্টরগুলোই বড় পার্থক্য করে দিতে পারে দেশ দুটির অর্থনীতির ব্যবধান।
Advertisement
উদাহরণস্বরূপ, গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দেয় যে চীনের জিডিপি ২০৩১ সালে ৩৮ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে, সেই বছরের বিদ্যমান বাজার মূল্য ও বিনিময় হারকে সমন্বিত করে। এটি তার বর্তমান জিডিপির দ্বিগুণেরও বেশি এবং এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। যার বেশিরভাগই উচ্চ মূল্য এবং মুদ্রার মূল্যায়ন থেকে আসবে।
পূর্বাভাস বলছে, চীনের জিডিপি ২০৩১ সালে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি হবে (এক বছরে গড় বৃদ্ধির ৪ শতাংশের কম)। দেশটির পণ্য ও সেবার দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি হবে, এবং এর বিনিময় হার প্রায় ১৩ শতাংশ শক্তিশালী হবে। প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে এই তিনটি কারণের সমন্বয়ই নির্ধারণ করবে যে চীন কখনো বিশ্বের অবিসংবাদিত অর্থনৈতিক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হবে কিনা।
সূত্র: দ্যা ইকোনমিস্ট
এসএনআর/জিকেএস