সম্প্রতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঠাকুরগাঁওয়ের এক অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার শিবগঞ্জে অবস্থিত বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হবে এ ঘোষণা দেয়ার পর জেলার সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছে।মন্ত্রী ঠাকুরগাঁও থেকে যাওয়ার পর থেকেই জেলার মানুষের মুখে মুখে এখন বিমানবন্দর চালু করার গল্প। আর এই গল্পকে কেন্দ্র করে আগামীতে এ জেলায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে যাওয়ারও কথা ভাবছেন অনেকে।এ প্রসঙ্গে সমাজসেবক শামসুল আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটি পড়ে রয়েছে। মন্ত্রী সাহেব চালুর সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের কথা বলে গেছেন। কবে নাগাদ বিমানবন্দর চালু হবে, না আগের অবস্থায় থাকবে এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত নই। যদি এই বিমানবন্দর চালু হয় তাহলে ঠাকুরগাঁও অন্যান্য জেলা থেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার দে জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগের বিমানবন্দরটি চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরটি চালু হলে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ সুবিধা ভোগ করবে না আশের পাশের কয়েকটি জেলায় কয়েক লক্ষ মানুষ এর সুবিধার আওতায় আসবে। তখনই মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাবে।ঠাকুরগাঁওয়ের শারীফ বিমান এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার সাকের উল্লাহ জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট অনেক বিক্রি হয়। সেই পরিমাণ সেবা দিতে আমরা পারছি না। তাই বেশির ভাগ মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে যায়। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনকে পরিণত হবে ও মানুষ কম সময়ে দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাতে পারবে।ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ে ভালো না হওয়ায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ নেই। যদি শিবগঞ্জ বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়। তাহলে এই এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ-মাদারগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির উপর এ বিমানবন্দরটি স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিশেষ কৌশল প্রয়োগের জন্য এ বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়। এ বিমানবন্দরের রানওয়েটি দীর্ঘ ৩ কি.মি. লম্বা। এর পশ্চিম প্রান্তে ১০টি সাব-রানওয়ে ছিল। এতে কয়েক ডজন যুদ্ধ বিমান লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমান বন্দরের সমস্ত জমি ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিভিল এ্যাভিয়েশন বিভাগ ১১০ একর জমি একোয়ার করে। ওই জমিতে বিমানবন্দরের স্টল ভবন, রানওয়ে রয়েছে।বিমানবন্দরটি নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন তা চালু ছিল। পাকিস্তান আমলেও ত্রাণ সামগ্রী পরিবহনসহ জরুরী কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। ওই সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান সার্ভিস চালু ছিল। তখন থেকেই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদসমূহের সঙ্গে ঢাকার বিমান যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৮০ সালে লোকসানের অজুহাতে এ বিমানবন্দরটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে এ বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য এক কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামত, টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এয়ার বেঙ্গল ও বোরাকসহ ৬টি বেসরকারি সংস্থা ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে স্টল বিমান সার্ভিস চালু করার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে। কিন্তু চুক্তি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর কিছুদিনের মাথায় স্টল বিমান সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ৩৩ বছর বিমানবন্দরটি পড়ে থাকায় বর্তমানে গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। যথারীতি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বিমান এ বন্দরে ল্যান্ড করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এ বিমান বন্দরের ১০৫ একর জমি তাদের আওতায় নিয়ে স্থানীয়দের লিজ দেয়। সিভিল এ্যাভিয়েশন তাদের ১১০ একর জমির মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করেছে। সামরিক ভূ-সম্পত্তি বিভাগ তাদের ৩০ একর জমি সাধারণ কৃষকদের মাঝে লিজ প্রদান করেছে। ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের প্রশাসক মুহম্মদ সাদেক কুরাইশী বলেন, সড়ক পথে ঢাকা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। ঠাকুরগাঁওবাসী এ বিমানবন্দরটি চালুর জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এমএএস/এবিএস
Advertisement