পাবনার ঈশ্বরদীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খামারে প্রতি পিস ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ১ টাকা ৩০ পয়সা। আগে যে ডিম বিক্রি হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা, এখন তার বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। তারপরও ডিমে লোকসান হচ্ছে বলছেন খামারিরা।
Advertisement
খামারিদের দাবি, একটি ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯ টাকা ৯১ পয়সা। সে হিসাবে প্রতি পিস ডিমে ৮১ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
শুধু ডিমে নয়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেও লোকসান হচ্ছে বলছেন খামারিরা। তাদের দাবি, তারা প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছেন ১৪০ টাকায়। অথচ উৎপাদন পড়ছে ১৪৫ টাকা। সে হিসাবে কেজিতে পাঁচ টাকা লোকসান হচ্ছে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঈশ্বরদীর পোলট্রি খামার, ডিমের আড়ত ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, এক সপ্তাহ ধরে ডিমের বাজার কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে খামারিদের খরচ হয় ৯ টাকা ৯১ পয়সা। এখন খামারে বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। ডিমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখনো লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।
তিনি বলেন, ‘ডিমের দামে বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় খামারিদের লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খামারিদের প্রতিটি ডিম কমপক্ষে ১০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। তবেই লোকসানের হাত থেকে তারা বাঁচতে পারবেন।’
‘ডিমের দাম সমন্বয়ে কোনো সুখবর না থাকলেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ২৯ টাকার ভুট্টা ৩৬ টাকা হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অন্যদের মতো আমাদেরও খামার বন্ধ করে দিতে হবে’, যোগ করেন খামারি আকমল হোসেন।
দিকশাইল দেওয়ান গ্রামের পোলট্রি খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ে শুধু ডিমের দাম বাড়ে না। ১০ বছর আগেও প্রতি হালি ডিম ছিল ৩২ টাকা। এখনো সেই ৩২ টাকাই আছে। লোকসানের কবলে পড়ে গত দুই বছরে ঈশ্বরদীর প্রায় দুই শতাধিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে।’
Advertisement
খরচের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে খামার শ্রমিকের মাসিক বেতন ছিল পাঁচ হাজার, এখন ১২ হাজার টাকা। এক হাজার মুরগির খাঁচা করতে এখন খরচ হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ এক বছর আগেও খরচ হতো এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সব কিছুরই দাম বেড়েছে। অথচ খামারের ডিম ও মুরগির দাম বাড়েনি।’
নওদাপাড়া গ্রামের পোলট্রি খামারি খোকন হোসেন বলেন, ‘প্রতি কেজি ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ হয় ১৪৫ টাকা। পাইকারদের কাছে আমরা বিক্রি করছি ১৪০ টাকা কেজি দরে। এতে প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে পাঁচ টাকা। এভাবে লোকসান অব্যাহত থাকলে খামার একসময় বন্ধ করে দিতে হবে।’ এ অঞ্চলের ডিমের সবচেয়ে বড় আড়ত পাবনার টেবুনিয়া। এখানকার ডিমের আড়তদার আশরাফুল ইসলাম জানান, সোমবার প্রতি পিস ডিম ৯ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে।
ঈশ্বরদী বাজারের ডিমের আড়তদার সাইদুর রহমান টিটু বলেন, আজকের বাজারে প্রতি পিস ডিম ৯ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি করছি। খামার থেকে ৯ টাকা ১০ পয়সা করে কিনেছি।
বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা ঝন্টু স্টোরের স্বত্বাধিকারী ঝন্টু রহমান বলেন, ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। ডিমের হালি আজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
এসআর