ক্রমেই পাঠক কমছে সাতক্ষীরার একমাত্র সরকারি গণগ্রন্থাগারে। প্রয়োজনীয় সবধরনের ব্যবস্থা থাকলেও গ্রন্থাগারমুখী হচ্ছে না পাঠকরা। এজন্য বইয়ের ডিজিটাল ভার্সনের সহজলভ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তিকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকৃত পাঠকরা গণগ্রন্থাগারে না আসলেও পড়া থেকে পিছিয়ে নেই। তারা এখন অনলাইনেই প্রয়োজনীয় সব বই পড়তে পারছেন। অনেক ক্ষেত্রে যেসব বই মফস্বলের গণগ্রন্থাগারে পাওয়া যায় না, পাঠকরা সেসব বইও অনলাইনে পড়তে পারছেন।
আবার, অনেকে মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আসক্তির কারণে পাঠকরা বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছেন। এর ফলে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কোনোক্রমেই গড়ে উঠছে না।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে একসঙ্গে ১০৫ জন পাঠকের বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এখানে মাত্র সাত থেকে আটজন পাঠক বই পড়েন। পাঠকদের তদারকির জন্য স্টাফ রয়েছেন তিনজন। গণগ্রন্থাগারের আলমারিগুলোতে অলস পড়ে আছে কয়েক হাজার বই।
Advertisement
বই পড়তে আসা কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গণগ্রন্থাগারে এসে সব ধরনের বই পাই না। এছাড়া এখানে একাডেমিক কোনো বইপত্র নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাহলে গণগ্রন্থাগারে এসে আমাদের লাভ কী? আর বিদ্যুৎ চলে গেলে এখানে অন্ধকার হয়ে যায়। বিকল্প আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মো. আনিসুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে বই পড়ছেন। অনেক ক্ষেত্রে লাইব্রেরিতে গিয়েও অনেকে প্রয়োজনীয় বই পান না। তবে, যারা গবেষণাধর্মী কাজ করেন তাদের জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। আবার, অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যেটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সবার লাইব্রেরিতে যাওয়া উচিত, পরিকল্পিত উপায়ে তরুণদের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কবি ও প্রাবন্ধিক শুভ্র আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গণগ্রন্থাগারে বর্তমানে যে বইগুলো রয়েছে বা পাঠকরা বাসায় নিয়ে পড়ছে তাতে পাঠকদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। একসময় বই পড়ে পাঠকরা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিনোদন পেত। এখন জ্ঞান ও বিনোদনের জন্য পাঠকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবের মধ্যে থেকে সবকিছু পাচ্ছে। যার কারণে লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। পাঠকদের লাইব্রেরিমুখী করতে হলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে পাঠকরা ঘরবন্দি ছিল। এজন্য সেই সময় অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া জেলাতে গণগ্রন্থাগার রয়েছে, এটা অনেক পাঠক জানেই না। এটা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পাঠকদের জানাতে হবে। এছাড়া জেলা গণগ্রন্থাগারকে ডিজিটাল রূপে রূপান্তর করতে হবে। তাহলে পাঠকরা আগের মতো গ্রন্থাগারমুখী হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. জিয়ারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা গণগ্রন্থাগারে পুস্তক রয়েছে ৩ হাজার ৩৫২টি। নিয়মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা নেওয়া হয় ১১টি। বাংলা সাময়িকী ১০টি ও ইংরেজি সাময়িকী নেওয়া হয় দুটি। এছাড়া আমাদের এখানে পাঠকদের জন্য তিনটি কম্পিউটার ও ফ্রি ইন্টারনেট রয়েছে। আমাদের নিয়মিত পাঠক সদস্য ১১০ জন।
Advertisement
তিনি বলেন, গণগ্রন্থাগার শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া আমাদের আটজন স্টাফের জায়গায় তিনজন রয়েছি। গ্রন্থাগারের সৌরবিদ্যুতের লাইনটি নষ্ট হয়ে গেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে আরও পাঠক বাড়বেও জানান তিনি।
এমআরআর/এএসএম