জাতীয়

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে হচ্ছে ৫০ কিমি সঞ্চালন লাইন

দেশের ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন নিশ্চিতে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগরের বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস আনা হবে। এ লক্ষ্যে বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে নারায়ণঞ্জের নিউ হরিপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইনের ব্যাস হবে ৪২ ইঞ্চি। বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সম্পন্ন হবে।

Advertisement

২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩০৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৫১২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বাকি ৭৯২ কোটি তিন লাখ টাকার জোগান দেওয়া হবে সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে। এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত সব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ১ শতাংশ।

প্রকল্পের ছয়টি প্যাকেজের আওতায় পাইপলাইন নির্মাণসামগ্রী কেনা হবে। এ লক্ষ্যে ছয়টি পৃথক আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র (ওপেন টেন্ডার) আহ্বান করা হয়েছে। দু-তিন মাসের মধ্যে এ টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। পাইপলাইন নির্মাণসামগ্রী দেশে আসার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকা ও হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং আড়াইহাজার এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। এসব এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক গ্রাহক ও অন্যান্য গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহের জন্য ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এ পাইপলাইনের ব্যাস হবে ৪২ ইঞ্চি।

Advertisement

ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হবে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে দেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়বে। জাপানি উদ্যোক্তারা দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। এসব কথা বিবেচনায় নিয়ে এখানেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উদ্যোগে গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।

প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ, পাইপলাইন ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি ক্রয়, ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ। এইচডিডি পদ্ধতিতে ৯টি নদী ক্রসিং এবং পিসি ভিত্তিতে তিনটি রেগুলেটিং ও মিটারিং স্টেশন স্থাপন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, মেঘনাঘাট পাওয়ার হাব এলাকায় বেসরকারি খাতে নির্মিত ৭৫০, ৫৮৩, ৫৮৪, ৪০০, ৪৫০, ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ৫৫২ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এছাড়া গজারিয়া, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাব এলাকায় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৩০ এমএসসিএফটি গ্যাস সরবরাহ করা হবে। মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় শিল্প, বাণিজ্য ও অন্যান্য গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ লক্ষ্যে বাখরাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এ পাইপলাইনের দৈনিক সঞ্চালন ক্ষমতা এক হাজার মিলিয়ন কিউবিক ফিট।

প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) মাধ্যমে বাখরাবাদ থেকে মেঘনাঘাট হয়ে হরিপুর পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২২৬ একর ভূমি অধিযাচন, পাইপলাইন সরঞ্জামাদি কেনাসহ ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) পদ্ধতিতে ৯টি নদী ক্রসিং করা হবে। গড়ে এসব নদীর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও তিনটি রেগুলেটিং অ্যান্ড মিটারিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।

Advertisement

যেসব কারণে এই প্রকল্প

নানা কারণে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা পূরণ ও ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে মহেশখালীতে স্থাপিত প্রতিটি ৫০০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতার দুটি লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), ফ্লোয়েটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) টার্মিনালের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানি করা গ্যাস চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলে সরবরাহের লক্ষ্যে মহেশখালী-আনোয়ারায় ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প চলমান।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। বিশেষ করে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলায় জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য জিটিসিএল বাখরাবাদ থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মেঘনাঘাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত গ্যাসলাইন সম্প্রসারণের জন্য জিটিসিএল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। জিটিসিএলের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে মোট এক হাজার ৬৯৪ এমএমএসসিএফডি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদনের পর কিছু কাজ থাকে। কাজগুলো শেষ করে প্রকল্পের ছয়টি প্যাকেজের আওতায় পাইপলাইন নির্মাণসামগ্রী ক্রয়ে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দু-তিন মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। মালামাল দেশে পৌঁছানোর পর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফিজিক্যালভাবে পাইপলাইন নির্মাণকাজ শুরু করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের যাবতীয় কাজ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পন্নের লক্ষ্যে সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে পারবো। প্রকল্পটি মূলত নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বাড়বে। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।’

এমওএস/এএএইচ/এসএইচএস/জেআইএম